১২ বছরেও কোনো সমাবর্তন করতে পারেনি বশেমুরবিপ্রবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর প্রায় ১২ বছর পার করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্র্যাজুয়েট সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। তবে এখনও কোনো সমাবর্তন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের হাতে মূল সনদ তুলে দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর ফলে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনকভাবে বের হয়ে যাবো, এটাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা থাকে। আর এই সম্মানজনক বিদায়ের উপায়ই হল সমাবর্তন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ১০-১২ বছরের বেশি সময় ধরে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতো বছর সম্ভব না হলেও আমি মনে করি আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সমাবর্তনের আয়োজন করা উচিত।

জাহিদুল বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল সনদও প্রয়োজন হয়। দ্রুত সমাবর্তন দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মূল সনদ বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে দ্রুত যেন সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’

বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমানে ৩৩টি বিভাগে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাদশতম ব্যাচে ভর্তি হবেন প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছরে চার সমাবর্তন

লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী উম্মে কুলসুম হেনা বলেন, ‘সমাবর্তন এমন একটা উপলক্ষ, যার মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থী নয় তার বাবা-মাও সম্মানবোধ করেন। আমার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুদের যখন দেখি তারা সমাবর্তনে তাদের বাবা-মাকে নিয়ে আসছে, সহপাঠীদের সাথে গাউন পড়ে উচ্ছ্বাস করছে—তখন নিজের মধ্যে আক্ষেপ হয়। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত সমাবর্তন আয়োজনের দাবি করছি।

২০০১ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। বিভিন্ন বাধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকার এসআরও জারি করে। অবশেষে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে, সমাবর্তন আয়োজন না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত নেই কোনো রেজিস্ট্রারভুক্ত গ্র্যাজুয়েটও। ফলে বশেমুরবিপ্রবি আইন ২০০১-এর ১৮নং ধারার ‘ঝ’ উপধারায় রিজেন্ট বোর্ডে রেজিস্ট্রারভুক্ত গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫ জন প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও এখনও সেই ৫টি পদ পূরণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভায় বশেমুরবিপ্রবি থেকে অধ্যয়ন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সমাবর্তন আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা উপাচার্য মহোদয়সহ সকলের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবো এবং দ্রুত সমাবর্তন আয়োজনের চেষ্টা করবো।’

বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই বছরেতো সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব নয়। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী বছরে সমাবর্তন আয়োজন করার। সবকিছু ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ আগামী বছরই সমাবর্তন হবে।’