পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ঢাবি কর্মচারীদের মানববন্ধন

মানবন্ধন
মানবন্ধন  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। সোমবার (৬ মে) বেলা ১১ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্মৃতি চিরন্তনের সামনে এই মানববন্ধন করে তারা।

গত (১৩ই মার্চ) বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (এস.আর.ও নং-৪৭-আইন/২০২৪) একটি বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের কারণে সকল শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘সকল স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তারা যে নামেই অভিহিত হন না কেন, ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভূক্ত’ করবে উল্লেখ আছে। হঠাৎ করেই এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারির ফলে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের স্ব স্ব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করে, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কর্মচারীরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন কর্মচারীদের জন্য ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভূক্ত কর্মচারীদের ন্যায্য দাবী আদায়ের সমর্থন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন ও কারাবরণ করেন।  এই প্রজ্ঞাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শনের শামিল বলে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা মনে করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের ফলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে। কেননা, এর ফলে যোগ্য ও দক্ষ জনবল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চাকরি করতে আগ্রহী হবেন না।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা কারিগরি সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা আজ ১ ঘন্টার কর্মসূচী দিয়েছি, আমরা এর প্রতিকার না পেলে পরবর্তীতে ৭ দিনের ভয়াবহ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবো। দরকার হয় রাজপথ দখল করবো। আমাদের পেটে অনেক ক্ষুধা, দয়া করে আমাদের পেটে লাথি মারবেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের পেনশনের বাস্তবায়ন করা হোক।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য সচিব মোবারক হোসেন বলেন, ২০১৫ সালের যে পেনশন ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের ঠকানো হয়েছে। আজকে আমাদের রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। পেনশন দেওয়া নিয়ে আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আমাদের উচিত সরকারের বৈষম্যমুলক কার্যকালাপের জন্য আমাদের প্রতিবাদ জোরদার করা। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে আসিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার মোর্শেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যারা চাকরি করতেছি, আমাদেরকে কালো আইন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আমরা কর্মচারীরা কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। জাতির বিবেক হিসেবে আমরা কর্মচারী সমাজ মনে করি এক দেশে দুই নীতি কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। আমার এক ভাই খাবে আর এক ভাই খাবে না এই নীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা মানে না। আমরা অধিকাংশই মাস্টার্স পাস করে চাকুরীতে যোগদান করেছি। কোনো দিক থেকে আমরা কম না। এখানে দেশ বিরোধী কোনো চক্রান্ত আছে কিনা সেটা দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানাই। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের নতুন পে স্কেল ঘোষণা করবেন, কিন্তু তা না করে মরার উপর খাড়া ঘা চাপিয়ে দিয়েছে।

 

সর্বশেষ সংবাদ