উপাচার্য ড. অনুপমের পদত্যাগ নিয়ে ‘গুজব’, যা জানা গেল

অধ্যাপক ড. অনুপম সেন
অধ্যাপক ড. অনুপম সেন  © সংগৃহীত

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন ২০০৬ সাল থেকে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত থাকা অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। ড. অনুপম সেনের পদত্যাগের বিষয়টিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

তারা দাবি করছে, ইসকন সমর্থক ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় কট্টরপন্থী ইসলামিস্ট গ্রুপ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। তবে এটি সঠিক নয় বলে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানার বলছে, তাদের টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু হওয়ায় চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেনকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়া এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ তুলে অনুপম সেন এবং আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মুখে অনুপম সেনসহ মোট পাঁচ জন পদত্যাগ করেন, যাদের মধ্যে অনুপম সেন ছাড়া বাকি চার জনই মুসলিম।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিওর সত্যতা জানা গেল

আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Private University Students Alliance of Bangladesh (PUSAB) নামের একটি পেজে গত ৩ নভেম্বর করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারের পদত্যাগের দ দফা দাবিতে হওয়া আন্দোলনের একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রহত্যার পক্ষে বিবৃতি দেওয়া ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ায় তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইসি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৪ ডিসেম্বর আন্দোলনের ডাক দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যেখানে চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র-জনতাকে অংশগ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ৪ ডিসেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাস ‘শাটডাউন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় বলে জানায় তথ্য যাচাই সংস্থাটি।

তারা বলছে, প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি’ -এর ব্যানারে নগরের জিইসি মোড় ক্যাম্পাসে উপাচার্য অনুপম সেন, সহ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা ও কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির তিনটি ক্যাম্পাসের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: পদত্যাগ করলেন জ্যেষ্ঠ সচিব ড. আবদুল মোমেন, হতে পারেন দুদক চেয়ারম্যান

রিউমর স্ক্যানার জানায়, প্রান্ত বড়ুয়া নামের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। তিনি জুলাই বিপ্লবের বিরোধী ছিলেন। সহ-উপাচার্য আর কোষাধ্যক্ষর বিরুদ্ধেও ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনে যাওয়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হয়েছিল। তারা স্বৈরচারের কোনো দোসরকে এসব পদে থাকতে দেবেন না। যতক্ষণ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় স্বৈরচারমুক্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এ ছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য ড. অনুপম সেনসহ উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী শামীম সুলতানা, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. তৌফিক সাঈদ, ছাত্রকল্যাণ ও এইচআর পরিচালক খুরশিদুর রহমান ও প্রক্টর আহমদ রাজিব পদত্যাগ করেন। 

তারা আরও বলে, প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্য অনুপম সেন এর গণমাধ্যমে পাঠানো একটি বিবৃতি পাওয়া যায়। বিবৃতিতে তিনি বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করলেও তার বিরুদ্ধে ধর্মের কারণে আন্দোলন করা হচ্ছে এমন কোনো বিষয় উল্লেখ করেননি।

আন্দোলনকারীদের দাবি কিংবা উপাচার্যের বিবৃতিতে কোথাও হিন্দু হওয়ায় পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করা হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া হিন্দু হওয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, এমন কোনো দাবি তিনি নিজেও করেননি। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে উপাচার্য অনুপম সেন, সহ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা ও কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদের পদত্যাগের দাবি করেছিলেন এবং তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাঁচজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন, যাদের মধ্যে ৪ জন মুসলিম।

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে ভারতকে কড়া বার্তা বাংলাদেশের

অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ধর্মীয় কারণে কিংবা সাম্প্রদায়িক কারণে ছিল না বরং কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা ধর্মনির্বিশেষে কয়েকজনের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করে। যে আন্দোলনের মুখে ভিসিসহ পাঁচ জন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দেশের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী।

সুতরাং হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার।


সর্বশেষ সংবাদ