আমি বিচার চাই তবে স্যারের দোষ নাই- বললেন সাধনা (ভিডিও)
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৫২ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৬:০২ PM
জামালপুরের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময়ের ভিডিও নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন সেই অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ছুটির জন্য আবেদন করতে আজ সোমবার সকালে জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মস্থলে আসেন তিনি। সেখানে ফাঁস হওয়া ভিডিও নিয়ে নিজের বক্তব্য সাংবাদিকদের জানালেন। এ সময় তিনি সবার প্রতি তাকে বাঁচতে দিতে আকুল আহ্বান জানান।
সকালে বোরখা এবং হিজাব পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হাজির হন সাধনা। এ সময় তার হাতে একটি ছুটির দরখাস্ত দেখা যায়। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে অফিসে হাজির হলেও সাংবাদিকদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি সাধনা। পরে ফাঁস হওয়া ভিডিও নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ সময় সাধনা সাংবাদিকদের নিকট আকুতি-মিনতি করে জানান, ‘আমি বাঁচতে চাই না, আমার সন্তানের জন্য আমাকে বাঁচান। এসব কিভাবে হল আমি কিছুই জানি না।
বিচার চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাধনা বলেন, আমি বিচার চাই। তবে স্যারের কোনো দোষ নাই।
এরপর সাধনা অফিসে একটি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে চলে যান। আবেদনে অফিস চলাকালীন সময়ে অসুস্থ বোধ করায় আগামীকাল ২৭ আগস্ট থেকে ৩ দিনের ছুটির কথা উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসকের গোপনীয় শাখার অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ওই নারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্রুত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করেন ওই নারী।
অফিস সহায়কের ছুটির আবেদন পত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার বলেন, সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নামের ওই অফিস সহায়কের ছুটির আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসক কর্মস্থলে যোগদান করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রোববার জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে ওএসডি করা হয়। একই সঙ্গে ডিসি আহমেদ কবীরকে সরিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ এনামুল হককে জামালপুরের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পড়ুন: স্বামীহারা সাধনার জীবন ছিল উশৃঙ্খলতায় ভরা
জামালপুর জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও প্রকাশের পর তাকে ওএসডি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ খবর জানাজানির পর জেলা প্রশাসক অফিসের অফিস সহকারী (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাকে নিয়ে মুখরোচক নানা কথা বলতে শুরু করেছেন। যারা ভয়ে এতদিন আহমেদ কবীর ও তার শয্যাসঙ্গীকে নিয়ে কোন কথা বলেননি, তারাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ভুক্তভোগীদের কয়েকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সানজিদা ইয়াসমিন অফিসে দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন। শুধু কর্মচারীরাই নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তিনি পাত্তা দিতেন না। চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে দেখা করেন সাধনা। সে সময় সাধনার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি আহমেদ কবীর। পরে উন্নয়ন মেলা চলাকালে আহমেদ কবীরের সঙ্গে সখ্য আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে সে সখ্য রূপ নেয় শারীরিক সম্পর্কে। সম্প্রতি সেই অবৈধ সম্পর্কের একটি ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়। তারপর থেকে ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হন তারা।
যেভাবে চাকরি পান সাধনা: চলতি বছর জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ডিসি অফিসে পিয়ন (অফিস সহকারী) পদে নিয়োগ পান সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। সেই সঙ্গে তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন তিনি।
অফিস সহায়ক বা সহকারী পদে সাধনা যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের পাশে ‘খাসকামরা’ হয়ে ওঠে মিনি বেডরুমে। যেখানে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে সাজ-সজ্জা করা হয়। সে রুমেই চলত আহমেদ কবীর-সাধনার রঙ্গলীলা। অফিস চলাকালে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয় লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে ‘লালবাতি’ জ্বলে উঠত। সে সময় দরজার সামনে পাহারায় থাকতেন তাদেরই বিশ্বস্ত কোনও অফিস সহকারী। যতক্ষণ লালবাতি জ্বলতো সাক্ষাৎপ্রার্থীতো দূরের কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। লীলা শেষ করে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতেন, তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। ‘সবুজ বাতি’ জ্বলে ওঠার পরই শুরু হতো তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম।
কে এই সাধনা? সাধনার জন্ম জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামে। মা ফেলানী বেগম। বাবা অহিজুদ্দিন। বাবার পেশা ছিল ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া। সাধনার জন্মের সময় অহিজুদ্দিনের ঘরে দেখা দেয় অভাব। সাধনার বয়স যখন ৭ দিন, তখন অভাবের তাড়নায় তাকে দত্তক দেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও নাছিমা আক্তার দম্পতির কাছে। তাদের লালন-পালনে বেড়ে ওঠা সাধনার লেখাপড়া চলাকালেই বিয়ে হয় একই উপজেলার জোনাইল গ্রামের বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী জাহিদুল ইসলামের সাথে। তাদের ঘরে পূর্ণ নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
২০০৯ সালে মারা যান সাধনার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর তার পালক পিতামাতার সাথে জামালপুর শহরের বগাবাইদ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরে টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। সাধনার উশৃঙ্খল জীবন-যাপন ও অবাধ চাল-চলনের কারণে টেকেনি দ্বিতীয় বিয়েটিও। দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজ ঘরেই দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন দেশি-বিদেশি প্রসাধনী। সেই ব্যবসাতেও টিকতে না পেরে শুরু করেন হস্তশিল্পের ব্যবসা। ২০১৮ সালের উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নিয়েই ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে গড়ে সম্পর্ক।