জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করবেন যেভাবে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩২ AM , আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০ AM
জাতীয় পরিচয়পত্র দৈনন্দিন জীবনধারায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপে প্রয়োজনীয় একটি নথি। বয়স ১৮ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০৮ সালের ২২ জুলাই থেকে। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর থেকে চালু হয় ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড।
২০২০ থেকে শুরু হয়ে গেছে এর অনলাইন সেবাও। কিন্তু প্রায়শই কার্ডে নানা ভুলের অভিযোগ পাওয়া যায়। জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার সময় ভুল তথ্য প্রদানের কারনে অথবা অপারেটরের ভুল টাইপিং করার ফলে আইডি কার্ডে ভুল চলে আসে। তবে এখন এখন ঘরে বসেই অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করা সম্ভব। ফিও দেওয়া যাবে সহজে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও প্রচলিত নিয়মে আবেদন করা যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম জানা খুবই প্রয়োজন।
এনআইডিতে ভুল থাকলে আপনি দুইভাবে সংশোধন করতে পারবেন।
১. প্রথমত, সরাসরি আপনার জেলা, উপজেলা, থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে এনআইডি কার্ড সংশোধন ফরম-২ সংগ্রহ করতে হবে। ফরমটি সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দিতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ বা রকেট) মাধ্যমে সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হবে। এরপর আপনার এনআইডির সংশোধন কার্যক্রম শুরু হবে।
২. অনলাইনেও এনআইডি সংশোধন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করলে আপনার ছবি, নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম তারিখসহ সকল তথ্য দেখা যাবে। আপনার এনআইডিতে যেসব তথ্যে ভুল আছে, সেটা সংশোধন করে আবেদন সাবমিট করতে হবে।
এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে যেসব প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া জরুরি:
১. এনআইডি কার্ডের সকল সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
২. পিতা/স্বামী/মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হলে সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
৩. আপনি অবিবাহিত হওয়ার পরও আপনার কার্ডে যদি ভুলক্রমে বিবাহিত লেখা থাকে, তাহলে সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আপনি বিবাহিত নন মর্মে প্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে।
৪. বিয়ের পর স্বামীর নাম যুক্ত করতে চাইলে নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করতে হবে।
৫. বিবাহবিচ্ছেদের পর এনআইডি থেকে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।
৬. বিবাহবিচ্ছেদের পর নতুন বিয়ে করলে আগের স্বামীর নামের জায়গায় বর্তমান স্বামীর নাম যুক্ত করতে হলে প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ের কাবিননামাসহ সংশোধন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
৭. পেশা পরিবর্তন করতে চাইলে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
৮. আইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তন করতে চাইলে নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে।
৯. নিজ/পিতা/স্বামী/মাতার নামের বানান সংশোধন করতে হলে আবেদনের সঙ্গে এসএসসি/সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহ্নামা, পিতা/স্বামী/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
১০. নিজের ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সঙ্গে এসএসসি/সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ, ইউনিয়ন/পৌর বা সিটি কর্পোরেশন হতে আপনার নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
১১. পিতা/মাতা/স্বামীকে মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে।
১২. শুধু আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে ফর্ম ১৩ এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোনো ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফর্মে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে।
১৩. অনেক সময় একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে পিতা/মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়। এক্ষেত্রে সকলের কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর পর্যাপ্ত প্রামাণিক দলিলসহ আবেদন করতে হবে।
১৪. অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ভুল করে শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদূর্ধ্ব লেখেন। এক্ষেত্রে সংশোধন করতে চাইলে আপনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসএসসি পাশ করেননি, ভুলক্রমে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করে এর কপিসহ সংশোধনের আবেদন করলে তা সংশোধন করা যাবে।
১৫. অনেক সময় একজনের আইডি কার্ডে অন্যজনের তথ্য চলে আসে। এক্ষেত্রে ভুল তথ্যের সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল উপস্থাপন করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের পর সঠিক পাওয়া গেলে সংশোধনের প্রক্রিয়া করা হবে।
১৬. রক্তের গ্রুপ যুক্ত বা সংশোধনের জন্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয়কৃত ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
১৭. বয়স বা জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদ না থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সকল কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস দিলে শেয়ার হবে ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে
১৮. স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে চাইলে নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে।
১৯. যে কোনো আইডি কার্ডের একটি তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কোনো সংশোধনই গ্রহণযোগ্য হবে না।
জাতীয় পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য লেখা থাকে সেগুলোর যেকোনো একটি সংশোধন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা ফি দিতে হবে। এছাড়া আরও কিছু তথ্য রয়েছে যেগুলো পরিচয়পত্রে লেখা থাকে না। সেগুলোও সংশোধন করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমবার ১০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তীতে প্রতিবার ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে।
শেষাংশ
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষত কার্ডে প্রদর্শিত তথ্যসমূহের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন এ তথ্যগুলো প্রদানের সময় বারবার ভুল না হয়। এই ভুলগুলো এড়ানোর জন্য নিবন্ধনের সময়েই প্রতিটি তথ্য হুবহু জন্ম নিবন্ধন ও মাধ্যমিক পরিক্ষার সনদের তথ্যের সাথে মিল রাখা উচিত।