আ’লীগ সিন্ডিকেটের কর্মকর্তাকে মাউশিতে ‘প্রাইজ পোস্টিং’, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ

শিক্ষা সমিতির শাহেদ-তানভির পরিষদের নির্বাহী সদস্য পদে ফিরোজ আলমের নির্বাচনের পোস্টার
শিক্ষা সমিতির শাহেদ-তানভির পরিষদের নির্বাহী সদস্য পদে ফিরোজ আলমের নির্বাচনের পোস্টার  © সংগৃহীত

শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) গুরুত্বপূর্ণ সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলমকে নিয়োগ দেওয়ায় তারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ‘বিতর্কিত’ এ কর্মকর্তা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল বিতর্কিত।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবী চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের লোকজন শিক্ষা প্রশাসনে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পাচ্ছেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও নওফেল সিন্ডিকেটের ফিরোজ আলমকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) সহকারী পরিচালকের (প্রশাসন) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) তাঁকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ফিরোজ আলম বর্তমান শিক্ষা সমিতির শাহেদ-তানভির পরিষদের নির্বাহী সদস্য বলে জানা গেছে। অধ্যাপক শাহেদুল খবির মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) এবং সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাসান সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন। তারা সবাই সাবেক দুই শিক্ষামন্ত্রীর সিন্ডিকেটের ঘনিষ্ঠ বলে শিক্ষা পরিবারে পরিচিত। তানভীর হাসানকে সরিয়ে একই প্যানেলের ফিরোজ আলমকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ফিরোজ আলম বর্তমান শিক্ষা সমিতির শাহেদ-তানভির পরিষদের নির্বাহী সদস্য বলে জানা গেছে। অধ্যাপক শাহেদুল খবির মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) এবং সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাসান সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন। তারা সবাই সাবেক দুই শিক্ষামন্ত্রীর সিন্ডিকেটের ঘনিষ্ঠ বলে শিক্ষা পরিবারে পরিচিত। তানভীর হাসানকে সরিয়ে একই প্যানেলের ফিরোজ আলমকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে পদার্থবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন।

শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সরকার যখন শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিল, তখন তানভীর-ফিরোজ আলমরা শিক্ষা সমিতির সর্বসম্মতি ছাড়াই ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ফিরোজ আলম জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। তাঁর পদটির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও নেই। তারপরও তাকে মাউশির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সভায় বসেছেন। তারা এ ধরনের পদায়ন বন্ধের জন্য দাবি জানাবেন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের পক্ষে যারা মিছিল-সমাবেশ করেছিলেন- তারা অনেকেই বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৩৬ জনের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে মীর রাহাত মাসুমকে মাউশির সহকারী পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে এনসিটিবিতে বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।

শিক্ষক নেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক এ জেড এম রুহুল কাদীর এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের পদে জ্যেষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি ট্রেনিং থাকতে হয়। অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এসব পদের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যতায় অনেক পিছিয়ে থাকা ফিরোজ আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক দুই শিক্ষামন্ত্রীর সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারাই এখনও নিয়োগ পাচ্ছে।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে ৮৪ শতাংশ মানুষ

এখনও নিয়োগে বৈষম্য হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনে আগের সেটাপই রয়ে গেছে। ফলে তারাই ঘুরেফিরে নিয়োগ পাচ্ছেন। যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ফিরোজ আলমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকার পরও এত বড় পদে এসেছেন। তারা এ ধরনের নিয়োগ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

শিক্ষা প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, বিগত সরকারের সময়ে শিক্ষা প্রশাসন, সরকারি কলেজসহ শিক্ষা দপ্তরসমূহে পদায়নের ক্ষেত্রে বদলি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনা ও বদলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেট করে শত শত মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাকে উপযুক্ত পদায়ন থেকে বঞ্চিত করেছেন তারা।

তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থানকারী, দুর্নীতিবাজ ও বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের পদায়নের বিষয়টি দুঃখজনক। এতে শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করবে এবং অন্তর্বতীকালীন সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ