ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও আশিকের ধর্ষণের শিকার

আশিকুল ইসলাম আশিক
আশিকুল ইসলাম আশিক  © ফাইল ফটো

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডের মূলহোতা আশিকুল ইসলাম আশিকের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় গত দেড় মাসে অর্ধশতাধিক ধর্ষণের সাথে জড়িত আশিক। এর মধ্যে ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কটেজ জোন লাইট হাউস সরণি এলাকায় যৌনপল্লী হিসেবে পরিচিতি লাভ করা কয়েকটি কটেজে নিয়মিত হানা দিয়ে সেখানকার তরুণীদের (যৌনকর্মী) বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেছে আশিক এবং তার সহযোগীরা।

শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে, লাইট হাউস এলাকায় মনোরঞ্জনের জন্য আসা শতাধিক পর্যটক ও কটেজে কর্মরত কর্মচারীদের উলঙ্গ ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায় করতো আশিক। বাদ যাননি পুলিশও। তবে এসব বিষয়ে মৌখিকভাবে তার বিষয়ে কটেজ ব্যবসায়ীরা পরিচিত পুলিশ সদস্যদের কাছে নালিশ দিলেও নিজেদের দুর্বলতা লুকাতে ও ভয়ে আশিকের বিরুদ্ধে মামলা করেনি কেউ।

আশিকের পাশবিক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আঁখি আক্তার (ছদ্মনাম) নামের এক তরুণী। ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা আঁখি আক্তার বলেন, আমার বাবা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এরপরও আমি পরিবারের ভার বহনের পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনার ধাক্কায় টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সীমাহীন আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ছোট-ভাইবোনদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধের উপক্রম। একপর্যায়ে আমার এক বান্ধবীর ফাঁদে পড়ে গত ৬ মাস ধরে কক্সবাজারে চলে আসি। এরপর বাধ্য হয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ি।

তার দাবি মতে, গত মাসে ২৪ বা ২৫ নভেম্বর রাতে আমের ড্রিম কটেজে হানা দেয় আশিক। তখন তার ভয়ে সেখানকার কর্মচারী সবাই সটকে পড়েন। আশিক প্রথমে ছুরি মারার ভয় দেখিয়ে কটেজে থাকা সব মেয়েদের পাশাপাশি সেখানে মনোরঞ্জনের জন্য অবস্থান করা অন্তত ১৫ জন পর্যটকের মোবাইল ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। পরে পর্যটকদের উলঙ্গ করে মেয়েদের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও ধারণ করে। পরে কারো কারো মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে তাদের মোবাইল নাম্বার নেয় আশিক ও তার লোকজন।

আঁখি আক্তার বলেন, ওই দিন আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় ভিডিও করে আশিক। তবে যাওয়ার সময় মোবাইল নাম্বার নিয়ে তার ফোনটি ফেরত দিয়ে মোবাইল বন্ধ পেলে ভিডিও ভাইরালের হুমকি দেয় আশিক।

তিনি বলেন, ঘটনার একদিন পর আমাকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা করতে বলে আশিক। দেখা করার পর ওই রাতে অপরিচিত একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে নিয়ে ইয়াবা সেবন করে রাতভর দফায় দফায় ধর্ষণ করে আশিক আর তার আরেক বন্ধু।

তার দাবি, আশিক অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করেছে বলে শুনেছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব অভিযোগ অকপটে স্বীকার করেছেন ওই সব কটেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, গত কয়েক দিন আগে আমের ড্রিম কটেজের স্টাফ আমান উল্লাহ ও ঢাকার বাড়ি কটেজের স্টাফ নাহিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের মারধর ও উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে আশিক। এরপর তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কটেজ ব্যবসায়ী বা পর্যটকদের কেউ অবগত করেননি। এরপরও অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপ চলা কটেজগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ