র‌্যাগিংয়ের মতো শিক্ষার্থীদের ৬ বুলিংও অপরাধ

শিক্ষার্থীদের অপরাধ জগতের খুব পরিচিত নাম ‘র‌্যাগিং’ হলেও বর্তমানে এরই মতো ভয়ংকর একটি নিপীড়নের নাম বুলিং। বর্তমানে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি শিক্ষার্থীরাও জড়াচ্ছে বুলিং নামে ভয়ংকর এ পথে। ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কোন একজনকে বারবার বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো বা আক্রমণ করাই বুলিং। আর এই বুলিং অপরাধের প্রতিকারের জন্য ইতোমধ্যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বুলিং হতে পারে বিভিন্ন নামে ব্যাঙ্গ করা, বদনাম করা, লাথি মারা, বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করা বা উত্ত্যক্ত করা। এমনকি অবহেলা বা এড়িয়ে চলে মানসিক চাপ দেয়াটাও এক ধরনের বুলিং। এক্ষেত্রে দুর্বল কাউকেই বেছে নেয় বুলিংকারী। স্কুল-কলেজ সহপাঠীদের মধ্যে এই বুলিং বিষয়টি ঘটে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন মিলে একজনকে বুলিং করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ন্যাশনাল সার্ভে অনুসারে, স্কুল জীবনে কোন না কোন সময়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বুলিংয়ের শিকার হয়। এর ফলে তাদের শিক্ষা জীবনে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বুলিং অপরাধের খসড়া নীতিমালায় দেখানো হয়েছে বুলিং এক ধরনের মৌখিক, মানসিক বা শারীরিক পীড়ন। এ নীতিমালায় মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক, সাইবার, যৌন ও বর্ণগত—এই ছয় ধরনের বুলিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সম্প্রতি এই খসড়া নীতিমালা দাখিল করা হয়। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার  গণমাধ্যমকে বলেন, খসড়া নীতিমালায় আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এগুলোর মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, মাদ্রাসা ও কোচিং সেন্টারগুলোকে এই নীতিমালার আওতায় আনতে বলা হয়েছে।

ছয় ধরনের বুলিং :

মৌখিক: কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

শারীরি: কাউকে কোনো কিছু দিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করা।

সামাজিক: সামাজিক স্ট্যাটাস, একক বা দলগত বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক সম্পর্ক, ধর্মীয় পরিচিতি বা বংশগত অহংবোধ থেকে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তা করতে প্ররোচিত করা।

সাইবার: বন্ধুদের মধ্যে কারো সম্বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূ কিছু লিখে বা অশালীন কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা।

যৌন: অপ্রত্যাশিতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েক জন মিলে জামাকাপড় খুলে নেওয়া বা খুলতে বাধ্য করা।

বর্ণগত: জাতি, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, পেশা এমনকি গায়ের রং নিয়েও বুলিং করা হয়।

খসড়া নীতিমালায় বুলিং প্রতিরোধে বাবা-মাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যাতে বুলিংয়ের শিকার না হয়, সেজন্য বাবা-মায়ের প্রথম দায়িত্ব হলো সন্তানের সাথে তার প্রাত্যহিক জীবন-যাপন নিয়ে খোলা মেলা কথা বলে সমস্যা চিহ্নিত করা, তাকে বুলিং সম্পর্কে অবহিত করা এবং মানসিক চাপ কমানোর সাথে সাথে বুলিং মোকাবেলায় সাহায্য করা।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে জায়গা গুলোতে বুলিং হওয়ার সম্ভবনা থাকে সেসব জায়গা খুঁজে বের করে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ