২৫শ টাকা ঘুষ পাওয়ার পর ‘চেচিচ নম্বর’ চোখে পড়ল বিআরটিএ কর্মকর্তার

বিআরটিএ অফিস যে দালাল রাজ্য। এই অফিসের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নানা কৌশলে দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সেখানে গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা হস্তান্তর, ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ যে কোনো কাগজপত্র সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারি ফি জমা দেওয়ার আগে দালালি কমিশন পরিশোধ করাটাই রেওয়াজ।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিআরটিএ অফিসের এমনই এক দুর্নীতির চিত্র তুলে এনেছেন রাজধানীর গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলদেশ’র শিক্ষক ড. আফজাল হোসেন খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‌‌‘গাড়ির নম্বর প্লেট ও ফিটনেস করানোর জন্য চট্রগ্রাম যেতে হবে। অনেকেই বললেন, টাকা দিলেইতো করানো যায়, গাড়ি নিয়ে তেল পুড়িয়ে এতো খরচ করে কী লাভ? ভাবলাম, ঘুষ দিব না। গাড়ির রং করালাম, কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে গাড়ি ঠিকঠাক করে গত ১২ তারিখ রাতভর গাড়ি চালিয়ে সকালে পৌঁছলাম চট্রগ্রামে। দালালদের ভীড়ে নিজেকে সামলে রাখলাম, অফিসার এলেন চেসিস নম্বর দেখলেন এক এক করে, কিন্তু চেসিস নম্বর তিনি (তারা) দেখতে পাচ্ছেন না। আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি; কিন্তু তারা দেখতে পাচ্ছেন না।’

বললাম ভাই কি করা যায়, এক চামচা এসে বললেন, ভাই ২৫০০টাকা করে মোট সাড়ে সাত হাজার টাকা দিলেই হয়ে যাবে। আমি বললাম আরে না ভাই চোখে চশমা দিলেই হবে। আপনারা চোখে দেখছেন না। আমার ড্রাইভাররা এসে বলে, স্যার বুঝেন না, ওদের সাথে পেচাইয়া পারবেন না; টাকা ছাড়া ওরা আর কিছু চোখে দেখে না। টাকা দেন নাইলে কোনকালেই ওরা চোখে দেখবে না, আপনার গাড়ি এভাবেই পরে থাকবে। আমিতো সরকারের ফান্ডে ফিটনেস ফি, নম্বর প্লেট ফি জমা দিয়েই রেখেছি। তাহলে কেন তাদের টাকা দিব? ড্রাইভার হেলপার বুঝাালেন, স্যার দিয়ে দেন। বুঝলাম বিপদে পরে গেছি, অফিসারকে বললাম, ভাই কম নেন। কম টম হবে না- এটা অফিসের রেট, এই টাকা কি আমরা নেই এগুলো সব চলে যায় উপরে, বুঝেন না?

আমি উপরে যেতে চাইলাম; তিনি বললেন- দেখেন পারে কি-না? বুঝলাম বিশাল সিন্ডিকেট, বড় বাবুরা তো আমাদের সাথে কথাই বলবে না। যাই হোক, আমরা ড্রাইভারকে দিয়ে ৭হাজার ৫০০টাকা দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই নম্বর প্লেট পেয়ে গেলাম। এক লোক লাগালেন বললেন ২০০ টাকা করে দিতে হবে। আরেক লোক আসলেন গাড়ি দেখে-শুনে রেখেছেন নাকি তাকে ২০০ টাকা করে দিতে হবে।

এরই মাঝে আসলেন ফিটনেস অফিসার। গাড়ির হেড লাইট, ব্রেক, ইঞ্জিন, রং সবই ঘুরে ঘুরে দেখলেন, আর মাথা নাড়লেন। বুঝালেন অনেক সমস্যা। জানতে চাইলাম, স্যার কী কী সমস্যা? তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এক চামচা ছুটে আসলেন; বললেন অনেক সমস্যা স্যার তো রাজিই না। কেন? আরে ভাই এতো কথা কইয়েন না, গাড়ি প্রতি ওনাকে দিতে হবে দুই হাজার, অফিসে দুই হাজার, আর যে লিখবে তাকে ২০০ করে দিতে হবে আর আমাকে যা দেন। বলেন কী! আমিতো সব টাকা ব্যাংকে জমাই দিয়েছি সরকারি ফি। ভাই তাইলে অন্য কোথায় দেখেন? অন্য কোথায় দেখব? ড্রাইভারের তো মাথায় হাত। আমার কাছে ছুটে এসে বলল, স্যার দিয়ে দেন। আপনার কাছে তো কমই চাইছে; আরো বেশি টাকা লাগে। যারা গাড়ি না আনে তাদের। বললাম দিব না, ঢাকায় অন্যান্য গাড়ির মালিক অনেককেই ফোন দিলাম। কী করা যায়? কেউ বলল, দিয়ে দেন ভাই আপনার কাছে কমই চাইছে; কেউ বলল, গাড়ি নিলেন কেন? ঢাকা বসে দালালরে টাকা দিলেই তো হয়, লাখ লাখ গাড়ি চলে মিয়া একদম কাগজ ছাড়া।

আপনি কেন, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, উকিল প্রমুখরাইতো গাড়ির মালিক। গরীবরা তো আর গাড়ির মালিক না, সবাইতো প্রকাশ্যে ঘুষ দিয়ে করেন আপনি আবার কোন চে-----?। কয়েকটা গালি খেয়ে চুপ হয়ে গেলাম ওই গাড়ির মালিকের। এমন সময় একজন অফিস কর্মকর্তা (যাকে দিয়ে লেনদেন করানো হয়) গোপনে আমাকে নম্বরটি দিয়ে বললেন, পার্টি পাইলে নিয়া আইসেন, কইরা দিমু। স্ট্যাটাসে তিনি ‘ই’ আদ্যক্ষরের ওই বিআরটিএ নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence