এসএসসি পরীক্ষায় নকল সরবাহের খবর প্রকাশ করায় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিকে অধ্যক্ষের হুমকি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ AM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ AM

রংপুরের মিঠাপুকুরে এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্রে নকল সরবরাহের সংবাদ প্রকাশ করায় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভুক্তভোগী সাংবাদিক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জানা গেছে, সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ‘চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে’ শিরোনামে ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। সংবাদটিতে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, গণিত,রসায়ন,পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানসহ ছয়টি বিষয়ের প্রতিপত্রে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার চুক্তিতে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হায়দার, অলি, রায়হান, সোহাগী ও শিক্ষক মুসাকে দিয়ে প্রতি রুমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ সংবাদ প্রচারের পর সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম মুঠোফোনে সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে হাটু ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এছাড়াও এই প্রতিবেদনের জন্য ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার হুমকি প্রদান করেন তিনি।
এ বিষয়ে রংপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি শাহ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি ও রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের কার্যকরী কমিটির সদস্য খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রশাসন অতিদ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং অধ্যক্ষ এর শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলমান থাকবে।
রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, পরীক্ষায় নকল সরবরাহের খবর পরিবেশন করায় সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে অধ্যক্ষ মাহিদুল আলম কর্তৃক হাঁটু ভেঙে দেওয়ার হুমকি প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে হুমকিদাতা অধ্যক্ষের অপসারণ এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাই।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলাম জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অর্থের বিনিময়ে নকল সরবরাহের প্রতিবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাকে যেভাবে হুমকি প্রদান করা হলো এটি কোন শিক্ষকের আচরণ হতে পারে না। শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ ও আমাকে আক্রমণের হুমকি প্রদান করার জন্য এবং অর্থের বিনিময়ে নকল বাণিজ্য করার জন্য অতিদ্রুত তদন্ত করে এই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।এই হুমকি বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের কন্ঠরুদ্ধ করার অপচেষ্টা। স্বৈরাচার আমলে আওয়ামী কোটায় নিয়োগকৃত এই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করছি সরকারের কাছে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম আমার পাশের গ্রামের বাসিন্দা। আমার পরিচিত মানুষ। এ কারণে তাকে এভাবে বলেছি। তবে, তার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই।
এ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, এঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।