বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চোখ হারানো ফরিদকে এবার কুপিয়ে জখম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৬ PM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৬ PM

ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছিলেন কিশোর মো. ফরিদ শেখ ওরফে লাবিব। সেই ফরিদ এবার নিজ এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় রক্তাক্ত হলেন। রোববার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের গোপেরহাট এলাকায় তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে একদল দুর্বৃত্ত।
হামলায় আহত ফরিদ (১৭) বর্তমানে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মাথা, হাত ও শরীরে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রডের গভীর আঘাত রয়েছে। চোখ হারানো তরুণ এখন আহত শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন হাসপাতালের বেডে।
ফরিদ শেখ পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াছ শেখ ও সালমা বেগমের পালিত সন্তান। স্থানীয় তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। গত বছর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ আগস্ট দুপুরে চোখে গুলিবিদ্ধ হন ফরিদ। চিকিৎসকদের চেষ্টায় জীবন ফিরে পেলেও বাম চোখ হারাতে হয় তাকে।
ফরিদের মা সালমা বেগম সোমবার দুপুরে পিরোজপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পুরনো একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বশত্রুতার জেরে রাকিব কাজী নামের এক যুবক ফরিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালায়।
আহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোজার মাসে গ্রামের একটি মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে রাকিব কাজীর সঙ্গে ফরিদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাট হলেও ক্ষোভে ছিলেন রাকিব। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদ যখন গোপেরহাটের ভাঙ্গা পুল এলাকায় একা যাচ্ছিলেন, তখন রাকিবের নেতৃত্বে সিয়াম শিকদার, নাছির কাজী, শাকিল শিকদারসহ আরও কয়েকজন মিলে তাকে ঘিরে ফেলে।
ফরিদ জানান, ওরা আমাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে। এরপর ধারালো দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে। মাথা, হাত, পিঠে একের পর এক কোপ। একজন আবার লোহার পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকে। আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন দৌঁড়ে আসে, তখন তারা পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ফরিদকে স্থানীয় এক হোমিও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুস সোবাহান বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গেছে। একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে রাকিব কাজীসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সঙ্গে অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চোখ হারিয়ে যে কিশোরের জীবন থমকে গিয়েছিল, সেই ফরিদ ফের একবার চরম সহিংসতার শিকার হলো নিজ গ্রামেই। আন্দোলনের মঞ্চ থেকে উঠে আসা এই কিশোরকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ আর ক্ষোভ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফরিদ শুধু একজন কিশোর নয়, সে হচ্ছে সমাজের মুখপাত্র, অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠ—যার জীবন বাঁচানো এখন শুধু চিকিৎসকদের নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব।