স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে বরখাস্ত অফিস সহকারী

অভিযুক্ত ‍নুর নবী
অভিযুক্ত ‍নুর নবী  © টিডিসি ফটো

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে উঠেছে আর এম হাট কে উচ্চ বিদ্যালয়ের  অফিস সহকারী নুর নবীর বিরুদ্ধে। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে অভিযুক্তের সাময়িক বরখাস্তের সত্যতা নিশ্চিত করেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান। 

কামরুল হাসান বলেন, তদন্তে অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অফিস সহকারী নুর নবী কর্তৃক শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে আসছে এই ছাত্রী। এর মধ্যে দুই জন সহকারী শিক্ষিকাকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিষয়টি জানিয়ে এর থেকে নিস্তারের বিচার চায়, কিন্তু শিক্ষিকারা কর্ণপাত করেন নি। একই সময়ে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের বিষয়টি জানিয়ে সে কান্নাকাটি করে এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।

সর্বশেষ অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক এই ঘটনা প্রকাশ হলে বিদ্যালয়ের বদনাম হবে মর্মে জানিয়ে দেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সময় বেঁধে দেওয়া হয়।  

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার সহায় সম্বলহীন ও হত দরিদ্র। তার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ ও মা বাকপ্রতিবন্ধী। তার পরিবারের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত নুর নবী ছাত্রীকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ারও প্রলোভন দেখায়। প্রস্তাবে রাজি না হলে ছাত্রীকে হত্যা করার হুমকি দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত অফিস সহকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরের দিন থেকেই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। 

এদিকে গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে সোনাগাজী-ফেনী মহাসড়কের মতিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড অবরোধ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নয়তো, ফৌজদারি অপরাধেও অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানায়। পরে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান, সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ আকন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত হয়ে অফিস সহকারীকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ স্থগিত করে বিদ্যালয়ে ফিরে যায়।

একই দিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজে বাদি হয়ে অভিযুক্ত অফিস সহকারী নুর নবী কে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। 

বায়েজিদ আকন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শ্লীলতাহানির শিকার ওই শিক্ষার্থী নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে একজনকে আসামি করা হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত নুর নবী ২০২২ সালে একবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে আবার একই স্কুলে অফিস সহকারী পদে চাকরি শুরু করে। তারা আরও জানায়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরো আগেও উঠেছিল। কিন্তু হুমকি-ধামকির মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খুলেনি।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ জুলাই নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নুর নবীকে গ্রেপ্তার করেছিল সোনাগাজী থানা পুলিশ। তৎকালীন সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই প্রফেসর হারুনুর রশিদ। নুর নবী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুসারী হওয়ায় মামলা তুলে নিতে শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ও নুর নবীর ঘনিষ্ঠ লোকজন। একপর্যায়ে চাপে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার মামলা তুলে নেয়। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence