লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না দেওয়ায় হয়রানি, বন্ধ প্রবাসীর বাড়ি নির্মাণ

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না থমকে আছে ভবনের নির্মাণকাজ।
লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না থমকে আছে ভবনের নির্মাণকাজ।  © সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে বাড়ি নির্মাণে চাঁদা না দেওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মো. রেজাউল করিম প্রকাশ বাবু ও তাঁর সহযোগীরা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন’র মিথ্যা অভিযোগ তুলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় অভিযোগ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ তদন্ত বা পরিমাপ ছাড়াই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এতে রড, সিমেন্টসহ নানা নির্মাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্তের ভয়ে প্রবাসীর পরিবার বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগী কাতার প্রবাসী খোরশেদ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডস্থ দক্ষিণ বাঞ্চানগর এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে। তাঁর মালিকানা জমিটি পৌর ৬নং ওয়ার্ডস্থ সুলতান কমিশনার সড়কের আনু বেপারী বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়। আর মো. রেজাউর করিম (বাবু) পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডস্থ বাঞ্ছানগরের নুর মোহাম্মদের ছেলে। 

প্রবাসী খোরশেদের আত্মীয় মঞ্জু হোসেন অভিযোগ করে বলেন, জমি ক্রয় পরবর্তী একাধিকবার চাঁদা (টাকা) দিতে হয়েছে রেজাউলকে। স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় জমি রক্ষা ও পরিবারের নিরাপত্তায় চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছে খোরশেদ। চলতি বছরের জুলাই মাসে পুনরায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করায় রেজাউলকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা করা হয়। যা এখনো চলমান। 

আরও পড়ুন: নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্র ফোরামের

‘‘এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইমারত নির্মাণ আইন অমান্য’র বিষয় উল্লেখ করে পৌরসভায় অভিযোগ দেন রেজাউল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৌরসভাও তদন্ত কিংবা পরিমাপ ছাড়া খোরশেদের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে রড, সিমেন্টসহ দশ লাখ টাকার নির্মাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’—জানান তিনি।

মঞ্জু হোসেন বলেন, খোরশেদের ক্রয়কৃত জমি বুঝিয়ে না দিয়ে উলটো পৌরসভা ও আদালতে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন রেজাউল। প্রত্যেকবার মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নিতেন। রেজাউল নিজে বাড়ি নির্মাণের সময় ইমারত নির্মাণ আইন ভঙ্গ করেছেন। অন্যের বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে দেয়াল ও সরকারি রাস্তার ওপর ছাদ দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।  

প্রবাসীর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার বলেন, চাঁদাবাজ রেজাউল ও তাঁর সহযোগীদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। তিনি আমাদের জমি বুঝিয়ে না দিয়ে বারবার পৌরসভায় মিথ্যা অভিযোগ ও আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। আবার টাকা দিলে সেগুলো নিজেই প্রত্যাহার করে নেন। এখন আবার নতুন করে পৌরসভায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থী-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে নিহত ৪

এর আগে গত ২০২২ সালে পৌর ৬নং ওয়ার্ডস্থ মৃত. শামছুল করিমের ছেলে শাকিল ও তাঁর স্ত্রী রুনা আক্তারের (পুত্রবধূ) থেকে জমিটি ক্রয় করেন খোরশেদ। যা বাঞ্চানগর মৌজার সাবেক ৯৯১১ নং খতিয়ানের ৮৩৫৭ দাগ ও আর.এস ৩৭৫২ খতিয়ানের ১১০২৩ এবং ১১০২৪ দাগের অধীনে সোয়া চার শতাংশ জমি। 

জমিটি গত ২০১৯ সালে শাকিল ও রুনা আক্তার ক্রয় করেছেন মো. রেজাউল করিম এর থেকে। এছাড়া আরও ০.১৪৫ শতাংশ জমি মো. রেজাউল করিম ও মোখলেছুর রহমানের ছেলে মো. মহরম আলীর থেকে ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। যা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয় উভয় পক্ষ। তবে এখনো ওই জমিটি খোরশেদকে রেজিস্ট্রি দেওয়া হয়নি। 

এরপর নিজ ক্রয়কৃত জমিতে খোরশেদ বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়ে তৃতীয় তলার কাজ চলছে। এ অবস্থায় ইমারত নির্মাণ বিধি লঙ্ঘনের কথা বলে পৌরসভায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন রেজাউল। ওই অভিযোগে বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।  

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা এমরান হোসেন জানান, রেজাউল প্রবাসী খোরশেদের জমি বুঝিয়ে না দিয়ে উলটো হয়রানি করছে। কয়েক দফায় বিভিন্ন অযুহাতে চাঁদাও (টাকা) নিয়েছে। এখন আবার চাঁদা দাবি করছে সে। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, রেজাউলদের বারবার চাঁদা (টাকা) দেওয়ায় কাল হয়েছে প্রবাসী খোরশেদের। এখন কিছুদিন পর পরই তারা খোরশেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া অভিযোগ দেয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পেলে সেটি প্রত্যাহারও করে নেয়। রেজাউলরা প্রভাবশালী ও মাদকসেবী হওয়ায় ভয়ে তাদের এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ করছে না। 

মনিরুল ইসলাম (স্থানীয় সার্ভেয়ার) বলেন, খোরশেদের ক্রয়কৃত সোয়া ৪ শতাংশ জমি তাঁর ভোগদখলে পাওয়া যায়নি। তখন রেজাউল ও শালিসদারদের নির্দেশে রাস্তার জমি পরিমাপ করে খোরশেদকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আইনগতভাবে সরকারি জমি বিক্রি ও কাউকে মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া

অভিযোগের বিষয়ে মো. রেজাউল করিম বলেন, খোরশেদ ইমারত নির্মাণ আইন অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এজন্য পৌরসভায় অভিযোগ দিয়েছি। তাই আমার নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছে তারা। তবে একসময় ঋণ হিসেবে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। 

রেজাউল করিম বলেন, আমি জমি বিক্রি করেছি শাকিলের কাছে। তাই খোরশেদকে জমি বুঝিয়ে দিবো কেন। তবে সমঝোতা ও মনের মিল থাকলে অনেক কিছু হয়। কিন্তু খোরশেদের সঙ্গে মনের মিল নেই। তবে সমঝোতা কি চাঁদা দেওয়া (টাকা) ? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি রেজাউল। 

খোরশেদের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধের বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। 

তবে এসব বিষয়ে লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিশ্বেশ্বর দাস চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ