মেডিকেলে চান্স না পেয়ে ভুয়া ডাক্তার সামিউর, মুনিয়া এসেছেন শিখতে

সামিউর রহমান ও মুনিয়া খান রোজা
সামিউর রহমান ও মুনিয়া খান রোজা  © সংগৃহীত

তাদের দুজনের শরীরে দামি পোশাক। তার ওপরে ডাক্তারদের ব্যবহৃত অ্যাপ্রোন। কাঁধে ঝুলানো আছে স্ট্যাথোসকোপ। গলায় রয়েছে আইডি কার্ড। প্রথম দেখায় যে কেউ মনে করতে পারেন তারা এমবিবিএস চিকিৎসক। আসলে তারা দুজনে ভুয়া ডাক্তার সেজেছেন। তাদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আরেক আটক হয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর আটক হন মুনিয়া খান রোজা (২৫)। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আটক হন সামিউর রহমান (২৭)। আটকের পর তারা নিজেরা ভুয়া ডাক্তার সাজার কথা স্বীকারও করেছেন। তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে।

আটকের পর তারা ভুল স্বীকার করে জানিয়েছেন, সামিউর মেডিকেল চান্স না পেয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। তাই তিনি সে স্বপ্ন থেকে ভুয়া ডাক্তার সেজেছেন। তবে তিনি ডেন্টালের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে। আর মুনিয়া এসেছেন ডাক্তার হওয়া শিখতে।

ঢামেকে আটক মুনিয়া খান রোজার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার হাসনাকান্দি গ্রামে। মৃত করিম খানের মেয়ে তিনি। বর্তমান বংশাল নাজিমউদ্দিন রোডে ভাড়া থাকতেন।

অভিযুক্ত মুনিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখানে আসছি কাজ শিখতে। কারো ক্ষতি করি নাই আমি। গত এক মাসে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছি। আমি ভয়ে প্রথমে বলেছিলাম ঢাকা মেডিকেলের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক; কিন্তু আমি ভুল বুঝতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে আমি কোনো চিকিৎসক নই, চিকিৎসা পেশার সঙ্গে আমি জড়িতও নই।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক ওই নারী ঢামেক থেকে রোগী ভাগানোর কাজ করেন ও ফোন চুরি করেন। শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানরুল হক বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মুনিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারগারে পাঠানো হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তার ব্যবহৃত চিকিৎসকদের ইউনিফর্ম ও ভুয়া আইডি কার্ড।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, ওই ভুয়া নারী চিকিৎসক অ‍্যাপ্রোন পরে ও গলায় স্টেথোস্কোপ দিয়ে আইসিইউয়ের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন রুমে যাওয়া-আসা করছিলেন। পরে আনসার সদস্যদের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে ওই নারী বহির্বিভাগের গাইনি চিকিৎসক বলে পরিচয় দিলেও পরে তিনি স্বীকার করেন— তিনি কোনো চিকিৎসক নন।

সামিউরও আটকের পর নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। এক রোগীর কাছে পরিচয় দিতে গিয়ে ধরা খান তিনি ধরা খান। হাসপাতালের ওটি থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। আটক সামিউর রাজশাহী মহানগরীর উপ-ভদ্রা এলাকার রাশেদুর রহমানের ছেলে। পারিবারিকভাবে দাবি করা হয়েছে সামিউর মানসিক ভারসাম্যহীন।

আটকের পর তিনি বলেন, আমার নিজের ইচ্ছা শক্তি থেকেই আমি এমনটি করেছি। এক সময় আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। যখন সেটা পারিনি, তখন অনেকটা ঘোর থেকে এ পথে এসেছি।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, সামিউর আমাদের ইমার্জেন্সি বিভাগের ওটিতে ছিলেন। এ সময় দায়িত্বরতদের তার কথা-বার্তায় সন্দেহ হয়েছিল। পরে আনসার সদস্যরা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সম্ভবত তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ