কাঁথা সেলাই করে কারাগারে দিন যাচ্ছে জবি শিক্ষার্থী খাদিজার

খাদিজাতুল কুবরা
খাদিজাতুল কুবরা  © সংগৃহীত

‘কারাগারে কাজ করে থাকতে হয়, সেই কারণে খাদিজা রাইটার এর কাজটা বেছে নিয়েছিলো। খাদিজাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিলো। কনডেম সেলে রাখার পরে সেখানে খাদিজাকে দিয়ে মাটি কাটানো হয়েছে, ঘাস কাটানো হয়েছে। বর্তমানে সে কাঁথা সেলাই এর কাজ করে, সম্ভবত ১৭-১৮ দিনের মধ্যে তাকে ১টা কাঁথা সেলাই করতে হয়। জামিন স্থগিত হওয়ার পরে মামলায় এখন বিকল্প কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া সুযোগ নেই।’ কথাগুলো বলেছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার জবি শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার বড় বোন সিরাজুম মনিরা।  

সিরাজুম মনিরা বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে খাদিজা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের (২০১৯-২০) শিক্ষার্থী থাকতো। কারাগারে এখন পড়তে পারছে না। বর্তমানে কারাগারে থাকা অবস্থায় খাদিজার একটা সেমিস্টার চলে গেছে, আরেকটা সেমিস্টারও শেষ হওয়ার পথে। পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে তাকে আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। তারপর সব ডকুমেন্টস দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে পড়াশোনা করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে। কয়েকদিনের মধ্যে এবিষয়ে আবেদন করবেন বলে তিনি জানান।

খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে খাদিজার অবস্থান দ্বিতীয়। তার বাবা একজন কুয়েত প্রবাসী।

আরও পড়ুন: কোচিংয়ের আড়ালে ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নফাঁস

খাদিজার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন "খাদিজার কিডনিতে পাথর ছিলো ঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয় নাই। খাদিজার শরীরে সমস্যা নেই, সেখান থেকে রিপোর্ট করেছে তবে খাদিজার সাথে দেখা হলে বলে, ওর শরীর একদমই ভালো থাকে না। কারাগারে ওর পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছেনা। ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে একদম ভেঙ্গে পড়েছে"। 

তিনি বলেন, কারাগারে খাদিজার পেছনে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। আমরা মাসে দুবার তার সঙ্গে দেখা করি। এ পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অ্যাকাডেমিক নথি অনুসারে ২০২০ সালে যখন খাদিজার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। অথচ তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলা দুটি করা হয়েছিল। এরমধ্যে একটি মামলায় খাদিজার বয়স ১৯ এবং অন্যটিতে ২২ বছর দেখানো হয়।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আলম সওদাগর বলেন, গত এক বছর থেকে খাদিজা ক্লাসে অনুপস্থিত। খাদিজা খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। কিন্ত গত এক বছরে কারাগারে। বিষয়টি খুবই দু:খজনক বিষয়।  ও ছোট মানুষ।বুঝতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে। তিনি আরোও বলেন, আমাদের কি ই বা করার আছে। আমরা কি করতে পারব। আমরা তো আইনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারব না। আমি খুব করে চাই ,দ্রুত ওর জামিন হোক, ক্লাসে ফিরে আসুক।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ২৫ মিনিটের সময় মুঠোফোনে মেজর (অব.) দেলোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও দেখতে পান। ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের ভিডিওর সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় দেলোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। মামলাটি রেকর্ড করা হয় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। মামলার এজাহারের সঙ্গে তিন পাতার স্ক্রিনশট ও ভিডিও–সংবলিত সিডি সংযুক্ত করা হয়।
 
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, খাদিজাতুল কুবরা ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। আসামিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালাচ্ছেন।


সর্বশেষ সংবাদ