বর্ষার সুস্বাদু সবজি শাপলা, বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত হাট-বাজার
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৩ AM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:২০ AM
যশোরে বর্ষা মৌসুমে বেচাবিক্রির ধুম পড়েছে সবজি হিসেবে সুস্বাদু শাপলার। শাপলা দিয়ে মাছ রান্না কিংবা ভাজি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। প্রাকৃতিক বিলে ঝিলে কোনো প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে উঠছে রসালো এই সবজি। অল্প পরিমাণ মসলা দিয়ে কম সময়ের মধ্যে ভাজি করা যায়। তাই শিশু থেকে বয়স্ক সবাই শাপলা ভাজি খেতে পছন্দ করেন। গ্রামের হাট-বাজার কিংবা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে গৃহিণীরা শাপলা কিনে একটা মজাদার রেসিপি তৈরি করে নেন।
শাপলা আমাদের দেশের জাতীয় ফুল। তবে শাপলা ফুলের নিচের লম্ব লিকলিকে অংশটির আঁশ ছাড়িয়ে মানুষ সবজি হিসেবে ব্যবহার করে। আর সে কারণে বর্ষা মৌসুমে শাপলা নিয়ে একটা বিশাল কাণ্ড গড়ে উঠেছে গোটা যশোর জেলায় মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর । এই শাপলা নিয়ে গড়ে উঠেছে পাইকারি ও খুচরা বাজার। শাপলা সেই দুর থেকে । ভবদহের অনেক পরিবার আছে শাপলা বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহু পরিবার।বছরের চার থেকে পাঁচ মাস ভবদহ এলাকায় কৃষিজমি পানির নিচে থাকায় কৃষকের তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। তাই এ খানকার অনেক কৃষক বিলঝিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। পুঁজি ছাড়া এ ব্যবসায় বিভিন্ন বয়সের লোক সময় দিচ্ছে। মনোহরপুর ইউনিয়নের।
যশোররের রুপদিয়ার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী দয়াল জানান, একেকজন কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ মুঠো শাপলা সংগ্রহ করতে পারে।পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে একত্র করে। এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে বা পাড়া মহল্লায় বিক্রি করে থাকে।
বটিয়াঘাটার মো নুর ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, সারা দিন ভ্যান চালায়।এখন অনেক দিন হলো রাস্তায় তেমন কোন ভাড়াপাতি ও নেই।তার জন্য শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে একমুঠো শাপলা ১৪/১৫ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়িভাড়া খরচ পড়ে।পরে শাপলা বিক্রি হয় ২০/২৫ টাকা মুঠো। কোনো রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।কোন মতে সংসারের খরচ হচ্ছে। মনোহরপুর থেকে অনেকেই এই বর্ষার এই মৌসুমে কৃষক ও অসচ্ছল মানুষ বেকার হয়ে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে থাকেন।
বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা।শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে পানিতে ডুবে যাওয়া জমি ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। এমন কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে অনেক শাপলা সংগ্রহ করতে পারে। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন তারা। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন তারা।
উপজেলার আলিপুরের অজিত রায় জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১০-১৪ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর নিজের মটরভ্যান যোগে গ্রামে গ্রামে ও হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে ২০/২৫ টাকা দরে এক মুঠো বিক্রয় করে থাকি। শাপলা ক্রেতারা জানান,বাজারে সব তরিতরকারির দাম যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে বাজারে এখন কম দামে শুধু শাপলা পাওয়া যাচ্ছে। আরো অনেকেই জানান,কিচ্ছু করার নেই।টাকা ইনকাম করতে পারছি না।মাঠে ঘাটে কাজ কাম নেই।সংসারের খরচ করতেই হবে।বাজারে সব জিনিসের (তরকারি) দাম বেশি।তার জন্য বাজার থেকে ৫ মুঠো শাপলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার খাবার হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া দেশে বর্ষার এই মৌসুমে শাপলার যেমন হাট বসছে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে মনোহরপুর সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাঙালির জাতীয় ফুল শাপলা- সেই শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় সবজি-তরকারি।