নাটোরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শতাধিক ইপিজেড কর্মী, ঠাঁই নেই হাসপাতালে
- নাটোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০১:০৬ PM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০১:২৫ AM
নাটোরের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎই একের পর এক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের শ্রমিকরা। গত তিন দিনে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের সবাই পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের (ইপিজেড) শ্রমিক। ধারণা করা হচ্ছে, ওখানকার অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা।
এদিকে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরকারি ওষুধ না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জন, সেনাবাহিনী ও জেলা পুলিশ ৪০০টি আইভি স্যালাইন পাঠিয়েছে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সেবায় খুশি রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রবিবার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন ডেনিম ভিনটেজ (অ্যাবা), নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডি এবং আরও কয়েকটি কারখানার কর্মীরা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডে খাবার ও পানি গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। প্রথমে কয়েকজন হালকা অসুস্থতা অনুভব করায় ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল কবে, যা বলছে কর্তৃপক্ষ
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত ১১৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকে বাড়ি ফিরে গেলেও বর্তমানে অন্তত ৯৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ বিষয়ে অ্যাবা কারখানার শ্রমিক সিয়াম রেজা বলেন, ‘আমি বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কাজের ফাঁকে ইপিজেড এলাকার সরবরাহ করা পানীয় পানি খেয়েছিলাম। এর পর থেকেই পেটব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়।’
নাকানো ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত অভিষেক কুমারও একই কথা জানান।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. খোরশেদ আলম রানা বলেন, শ্রমিকদের খাবার বা পানিতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খাদ্যজনিত বিষক্রিয়ার কারণেই তাদের ডায়রিয়া, বমি ও পেটব্যথা দেখা দিয়েছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে ছুটি বাতিল করে অতিরিক্ত নার্স ওয়ার্ডে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুনজুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শতাধিক রোগী। আমাদের হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ৫০ শয্যা হওয়ায় জায়গা সংকটের সমস্যা হলেও আমাদের চিকিৎসা দিতে কোনো অবহেলা হয়নি। আমরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে অতিরিক্ত ডিউটির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস নিয়ে সবশেষ যা জানাল ইএমআইএস সেল
তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সিভিল সার্জন, সেনাবাহিনী ও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের জন্য আরও ৪০০টি আইভি স্যালাইন নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাটোর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফীন বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।’