নেতাই নদীতে হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, বর্ষার আগে বাড়ছে উদ্বেগ

অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে নেতা নদীতে
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে নেতা নদীতে  © টিডিসি ফটো

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদ। ভারত থেকে আসা নদীটি গর্জে ওঠে প্রতি বর্ষায়। দুই পাড় ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘরে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘরবাড়ী ভেঙে নিঃস্ব হয় শত শত মানুষ। দীর্ঘদিনেও হয়নি স্থায়ী পাকা বেড়িবাঁধ। ফলে এবারও বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নানা শঙ্কা ও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক পরিবার। 

নদীর আগ্রাসন কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীতে অসংখ্য ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খনন করে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙন নতুন করে ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর আকস্মিক বন্যায় নদীপাড়ের মানুষের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বসতভিটা, ক্ষেতের উঠতি ফসল, পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। নেতাই নদীর এমন তান্ডবে সব কিছু হারিয়ে প্রতি বর্ষায় নিঃস্ব ও ভূমিহীন হচ্ছে শত শত পরিবার। এতে বর্ষা এলেই এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অপু দাস বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে নেতাই নদীতে স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মাণে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আগে ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ প্রকল্প কতটা আলোর মুখ দেখবে, এ নিয়ে সন্দিহান খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ধোবাউড়াবাসীর চিরদিনের দুঃখ মুছে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ার রেহানা বেগম বিয়ের পর ৩০ বছর ধরে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন নদীপাড়ের জিগাতলা গ্রামে। বর্ষা এলে রাত জেগে বসে থাকতে হয় তাদের। এক বর্ষায় বানের পানিতে হারিয়েছেন তার শিশু সন্তানকে। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই বাধ ভাঙার আতঙ্কে থাকেন তিনি।

একই অবস্থা নেতাই পাড়ে বাস করা বাসিন্দাদের। প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর আকস্মিক বন্যায় নদীপাড়ের মানুষের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বসতভিটা, ক্ষেতের উঠতি ফসল, পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। নেতাই নদীর এমন তান্ডবে সব কিছু হারিয়ে প্রতি বর্ষায় নিঃস্ব ও ভূমিহীন হচ্ছে শত শত পরিবার। এতে বর্ষা এলেই এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বছরের পর বছর ধরে নেতাই নদীর এমন রুদ্রমূর্তির ভয়াবহতায় সবকিছু হারিয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। অনেকের ঠাঁই মিলেছে সরকারের আশ্রায়ণ প্রকল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত রেহানা বেগমের মতো এলাকাবাসীর দাবি, নেতাই নদীতে স্থায়ী একটি বেড়িবাধ হলে এভাবে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব ও ভূমিহীন হতে হতো না তাদের। অথচ স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণে কার্যকর কোনও উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি খরস্রোতা নেতাই নদী ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও, ভুইয়াপাড়া, জিগাতলা, গামারিতলা, দক্ষিণ মাইজপাড়া, কলসিন্দুর ও পুড়াকান্দলিয়া হয়ে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের কংস নদীতে মিলিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালে ঘোষগাও থেকে পুড়াকান্দলিয়া পর্যন্ত নেতাই নদীর ডান তীরে ২০ কিলোমিটার কাচা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কেবল বর্ষা মৌসুম এলে বাঁধের মেরামত ও সংস্কার কাজ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। তবে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় ঘোষগাও বিজিবি ক্যাম্পের কাছে কিছু অংশ সিসি ব্লক দিয়ে এবং জিগাতলা গ্রামে বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ মেরামত ও সংস্কার কাজে গত পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি। অথচ এ সময় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলায় কেবল কৃষি ও মৎস্যখাতসহ বসতবাড়ির ক্ষতি এ ব্যয়ের কয়েকগুণ। নেতাই পারের অসহায় মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এক শ্রেণির অর্থলোভী প্রভাবশালী বালু খেকো অসংখ্য পয়েন্টে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে।

আরো পড়ুন: ‘ভাইয়েরা রাস্তায় মরছে, আমি ঘরে থাকব কীভাবে?’— মিছিলে যাওয়ার আগে মাকে মেহেদী

অভিযোগ রয়েছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বদলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বছর বছর মেরামত ও সংস্কার কাজেই আগ্রহ বেশি। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। পুড়াকান্দলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক বলেন, অবিলম্বে নেতাই নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী ভেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাদিয়া ফেরদৌসী বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌশুমে ধোবাউড়ার ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে চলে আসা বালুর আস্তরণ পড়ে বিনষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। ভেসে যাচ্ছে পুুকুরের মাছ। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া কৃষি ও কৃষকদের এ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা কঠিন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, নেতাই নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে উপজেলা এবং জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটিতে একাধিকবার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ প্রস্তাবের কোন সাড়া মেলেনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence