ফেনীতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ

রেলপথ অবরোধ করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রেলপথ অবরোধ করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  © টিডিসি

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে ফেনীতে রেলপথ ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জেলার সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে শহরের রেলগেইট এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করে তারা।

এ সময় জেলার ফেনী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইসিএসটি) ও কম্পেক্ট পলিটেকনিকসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত ব্যক্তিরা মূলত অষ্টম শ্রেণি কিংবা এসএসসি পাস। তাদের বেশিরভাগেরই কারিগরি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অথচ এই পদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ‘জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর’ হিসেবে প্রমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য অযৌক্তিক ও অসম্মানজনক। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন।

আরও পড়ুন: ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ১৭১ জন নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন

অনিক দাস নামের এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন না তারা মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ল্যাব সহকারী কর্মচারী এবং সাধারণত অষ্টম বা এসএসসি পাস। তাদের ডিপ্লোমার শিক্ষক হওয়ার মতো কোনো যোগ্যতা নেই। যদি তারা ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান, তাহলে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান কতটুকু নিশ্চিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ইশতিয়াক আহমেদ সাব্বির নামের অপর এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। এই পদে সংশ্লিষ্ট টেকনোলজির ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদেরই নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। 

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত (সংশোধিত) ছয় দফা দাবি হলো
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবতর্ন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সন্তুষ্ট না: মির্জা ফখরুল

২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল সহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

আরও পড়ুন: ৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে পার্কে সেই হাসিমাখা ছবির ব্যাখ্যা দিলেন সাকিব

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রেল ও সড়কপথে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে দুপুর একটার দিকে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের দাবি মানার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

প্রসঙ্গত, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে প্রমোশনের জন্য আদালতে মামলা করলে সোমবার (১৮ মার্চ) আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। আর এই রায় প্রত্যাখান করাসহ ছয় দফা দাবিতে সারাদেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচি পালন করে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!