আবেদন ফি কমছে না, উল্টো ভ্যাটের চাপ চাকরিপ্রত্যাশীদের ঘাড়ে

দেশে দিন দিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।
দেশে দিন দিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।  © সংগৃহীত

দেশে দিন দিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট বৃদ্ধি। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে মানুষ শিক্ষাকে মূল্যায়ন করছে। এর ফলে প্রতি বছর যে হারে শিক্ষিত মানুষ বাড়ছে সে হারে তাদের মূল্যায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে সরকারি চাকরির আবেদন মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটের হার বসিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যার ফলে আবেদন ফি তো কমছেই না, উল্টো ভ্যাটের চাপ চাকরিপ্রত্যাশীদের ঘাড়ে। 

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির আবেদন ফি বাড়িয়েছে সরকার। এবার পরীক্ষার ফি’র সার্ভিস চার্জের (টেলিটক বাংলাদেশের কমিশন) ওপর ভ্যাট যোগ করে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফি বাবদ সংগ্রহ করা অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিটক বাংলাদেশকে দিতে হবে এবং কমিশন হিসাবে পাওয়া অর্থের ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাবে আদায় করা হবে।

চাকরিপ্রত্যাশীদের এখন থেকে নবম গ্রেডে আবেদন ফি হবে ৬০০ টাকা। এর সঙ্গে টেলিটক বাংলাদেশের সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ বা ৬০ টাকা দিতে হবে। ৬০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ বা ৯ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। অর্থাৎ নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে মোট ৬৬৯ টাকা দিতে হবে।

একইভাবে দশম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ৭ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দিতে হবে। অর্থাৎ দশম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে মোট ৫৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। ১১ ও ১২তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। এর সঙ্গে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও ৪ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দিয়ে আবেদনকারীকে মোট ৩৩৪ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ২০ টাকা এবং ভ্যাট ৩ টাকা যোগ করে আবেদনকারীকে মোট ২২৩ টাকা দিতে হবে। আর ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ১০ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ১ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যোট যোগ করে আবেদনকারীকে ১১১ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে।

সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন তোহা ইসলাম নামে এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেছেন, ‘নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। ঢাকায় টিউশনি করে চলতে হয়। খাবারের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে সরকার আবার চাকরির আবেদনের জন্য কর আরোপ করল যা খাড়ার উপর মরার ঘা। সবকিছুতেই এতো এতো বৃদ্ধি আমার মতো হাজারো বেকারের টিকে থাকায় দায়। যদি আমি দশটা আবেদন করি সেখানে এই করের হিসেবে আমি আরেকটি আবেদন করার সমপরিমাণ টাকা হয়ে যায় যা একজন বেকারের কাছে অনেক। সরকারের কাছে আমার দাবি থাকবে যাতে অন্তত আমাদের যারা চাকরি প্রত্যাশি বেকার তাদের জন্য এই কর কমিয়ে আনুক।’

নাকিবুল আহসান নিশাদ নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আবেদন ফি পূর্বে যা ছিল তা দিতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। তার উপর বর্তমানে কর সংযোজন করা হয়েছে। দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার সমস্যা সমাধানে চাকরির আবেদন ফি কমানো সময়ের দাবি। সরকারের কর আদায় খাতের বিপুল উৎস আছে৷ সেসব খাত থেকে কর আদায় করে বেকারদের কর্মসংস্থানে ক্ষেত্রে কম মৌকুফ করা উচিত।’

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে দুই বছর ধরে এখন চাকরির খোঁজ করছেন আসিফ খান। তিনি বলেন, ‘গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা এখন দায় হয়ে গেছে। এমনিতেই টিউশনির সীমিত আয়ে চলতে হয়। তার উপর অতিরিক্ত টাকায় আবেদনের উপর কর দিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে দিনে এক বেলা খেয়ে চাকরির আবেদন করতে হবে। বেকারদের উপর সরকার যে চাপ দিচ্ছে তাতে বেকারদের অবস্থা আরও কঠিন করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ক’জন সহ্য করতে পারবে জানি না।’

এদিকে, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে আবেদন ফি কমানোর দাবিতে বিভিন্ন সময় চাকরিপ্রার্থীরা কর্মসূচি পালন করেছেন। বেকারদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালে আবেদন ফি ছাড়াই আবেদনের সুযোগ দেওয়া শুরু করে। তবে অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে ফি কখনোই কমানো হয়নি। বরং বেড়েছে। এবার সরকারি চাকরির আবেদনের কমিশনের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছে অর্থ বিভাগ। 

চলতি বছরের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বর্তমানে দেশে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮২ লাখ ও নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ। আর বেকার সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুর‘র (বিবিএস) এক জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

প্রতিবছর তরুণ-তরুণী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশে চাকরির সংখ্যা না বাড়ায় শিক্ষিত বেকারের হার বাড়ছে। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। তার উপর বেড়েছে আবেদন ফি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence