বিষমুক্ত খামার গড়ে খাদ্য নিরাপত্তায় অংশ নিতে চান বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১০:১২ PM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১০:১২ PM
দেশে ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরনের কল কারাখানা তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত কমছে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ । কিন্তু দেশের বর্ধিত জন্যসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সমন্বিত কৃষি খামার একটি গুরত্বপূর্ণ সমাধান। সমন্বিত কৃষি হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একই সঙ্গে ফসল,গরু-ছাগল,হাঁস-মুরগী ও মাছ উৎপাদন সম্ভব। এতে দেশের মানুষের খাদ্য, পুষ্টি, জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিরাপত্তা সম্ভব। আর এমন সমন্বিত কৃষি খামার করে স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন দেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনই কিছু সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। এমনই একটি শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের মা বাবার এগ্রোফার্ম লিমিটেড।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একোয়াকালচার বিভাগের মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা তাদের মাঠ সফরের অংশ হিসেবে ওই কৃষি খামারে ভ্রমন করেন। মাঠসফর শেষে অনেক শিক্ষার্থীই এমন সমন্বিত কৃষি খামার করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের কথা জানান।
আরও পড়ুন: ৮ মিনিটেই ঢাকায় পড়ার স্বপ্নভাঙলো আল আমিনের
প্রায় ৮০০ একরের সমন্বিত কৃষি খামারটি ঘুরে দেখান খামারটির ম্যানেজার আবু সাইদ। তিনি জানান, একই সঙ্গে এই খামারে উৎপাদন হচ্ছে মাছ, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি। বর্তমানে বাগানটিতে মাল্টা, কমলা, আঙুর, ড্রাগন, লটকন, পেপে, পেয়ারা, লেবু, কুল ও সৌদি খেজুর, এভোকাডো, ছবেদা, মালবেরি, ত্বীন ফল, আলুবোখারা, ভিয়েতনামী নারিকেল, কিউই, আনার, থাই সরিষাসহ আরও ২৭১টি জাতের ফলের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয় মাল্টার যা বিক্রি করে বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা আয় হয়। এছাড়াও খামারে রয়েছে না প্রজাতির হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল এবং কবুতর।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা ভ্রমন করেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার একটি সমন্বিত কৃষি ফার্মে । যেখানে পুকুরে মাছের সঙ্গে পুকুরের পারে চাষ করা হয় বিভিন্ন ধরনের সবজি। বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে রয়েছে ঢেঁড়শ, লাউ, পেঁপে, বাঙ্গি, ডাটা, কলা প্রভৃতি।
একোয়াকালচার বিভাগের মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মোবিন হোসেন সোহান বলেন, আমারা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অনার্স ডিগ্রি শেষে সরকারী চাকুরির পেছনে ছুটি। তবে কৃষিতে কারিগরী জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা এমন সমন্বিত কৃষি খামার গড়তে পারি আমরা যেমন নিজেরা সফল হতে পারব তেমনি অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পাড়ব। আমিও স্বপ্ন দেখি একদিন এমন সমন্বিত কৃষি খামার গড়ার।
আরেক শিক্ষার্থী নুসাইফা আহসান বলেন, আজকে এই সমন্বিত খামারটি দেখার পর মনের মধ্যে এক নতুন স্বপ্নের উদয় হলো। চেষ্টা করব এমন একটি খামার করে বিষমুক্ত মাছ, সবজি এবং মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় অংশ নিতে।
মাঠ সফরে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ সালাম, একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, বাকৃবি হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহমুদুল, মো. তরিকুল ইসলাম, মোছা. উম্মে ওয়াহিদা রহমান এবং মোছা. শান্তা ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী বলরাম মহলদার।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার একেবারেই শেষ প্রান্তে। বেশিরভাগই এখন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্বপ্ন দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার। সমন্বিত মৎস্যচাষ ও সমন্বিত কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি এখন উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করছে। শহর থেকে গ্রামে এসে অনেক উদ্যোক্তারা গড়ে তুলছেন বিশ্বমানের সমন্বিত খামার, যেখানে বৈচিত্রময় খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সৃষ্টি করছে শত মানুষের কর্মসংস্থান। আধুনিক সমন্বিত খামারে শিক্ষার্থীদের সফরের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে তাদের অনেককে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি মনে করি।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ সালাম বলেন, সমন্বিত মৎস্য ও কৃষিভিত্তিক খামারগুলো সম্পর্কে আমরা তাত্তি¡বকভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়াই। কিন্তু ব্যবহারিকভাবে আমরা তাদের আধুনিক খামারের যে বিকাশ ঘটেছে সেগুলো সব সময় দেখাতে পারি না। মাঠে এসে শিক্ষার্থীদের এভাবে দেখাতে পারলে তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতা আসে।