খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখবে বাকৃবির হাইব্রিড ড্রায়ার
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৯ AM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৪ AM
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) “বাংলাদেশে মাছ ও ফসলের উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি কমানোর জন্যে হাইব্রিড ড্রায়িং সিস্টেম”- শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই উদ্বোধনীর আয়োজন করে বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ।
“কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) গ্রান্ট ফর টেকনোলজি ইনকিউবেশন ইন অ্যাগ্রিকালচার” খাত থেকে ওই প্রকল্পের অর্থায়ন করছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি (এমবিপিএলসি)। দুবছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের মোট আর্থিক বরাদ্দ এক কোটি ৬০ লাখ টাকা।
অনুষ্ঠানে হাইব্রিড ড্রায়ার গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা। এসময় তিনি জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ৭২ প্রকারের ফল ও সবজি উৎপাদিত হয়। দেশীয় মোট উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের অভাবে দেশে উৎপাদিত সবজি ও ফলের শতকরা প্রায় ২০ থেকে ৪৫ ভাগ এবং মাছের শতকরা প্রায় ৭ থেকে ২৩ ভাগ অপচয় বা নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, ফলে মৌসুম পরবর্তী সময়ে ওই সকল কৃষি পণ্যের বিরাট ঘাটতি দেখা যায়। এতে করে পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ঘাটতি থেকে যায়। এসকল কৃষি পণ্য শুকিয়ে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ হলো হাইব্রিড ড্রায়িং সিস্টেম। এর মাধ্যমে পণ্যগুলোর উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি শতকরা প্রায় ৫ থেকে ১০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
‘‘পাশাপাশি শুকনো খাবারের পুষ্টিমান বজায় রেখে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) একটি অন্যতম লক্ষ্য।’’
প্রধান গবেষক আরও জানান, এই গবেষণার সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো দেশের কৃষক এবং শিল্প উভয় পর্যায়েই ফসলের উৎপাদন পরবর্তী ক্ষতি কমানো, ফল, সবজি ও মাছ শুকিয়ে যথাযথ সংরক্ষণ ও সেগুলোর যথাযথ পুষ্টিগুণ বজায় রাখা।
হাইব্রিড ড্রায়ার প্রকল্পের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিএসআর গ্রান্ট ফর টেকনোলজি ইনকিউবেশন ইন অ্যাগ্রিকালচারের প্রধান সমন্বয়ক এবং এমবিপিএলসির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ড. তাপস চন্দ্র পাল, এমবিপিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসাইন এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প পরিচালক এম আই এম জুলফিকার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের সহকারী প্রধান গবেষক এবং ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার। অনুষ্ঠান শেষে একটি মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় প্রকল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসা উত্থাপন করেন কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা। পরে সেগুলোর উত্তর বিশ্লেষণ করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক।
উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলের। কৃষিবিদ হিসেবে ওই দায়িত্ব অনেকাংশেই আমাদের ওপরেই। আমাদেরকে আরও বেশি করে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। দেশে পুষ্টি নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। সেখানে যদি সেটির খাবার অপচয় হয় তাহলে এ ঘাটতি আরো বাড়বে।
বাকৃবি উপাচার্য বলেন, বর্তমানে বাজারে ফল, সবজি এমনকি মাছ সংরক্ষণের জন্যেও বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। শুঁটকি মাছের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ঠিক এই জায়গাটিতে ভূমিকা রাখতে পারবে হাইব্রিড ড্রায়ার। আবার একবার শুকিয়ে প্যাকেটজাত করলে সেটি সংরক্ষণে আর কোনো খরচ করতেও হয় না। ফলে এটি সাশ্রয়ী হবে এবং আমার দেশের কৃষক লাভবান হবেন।