এক রোপনে একাধিক ফলনের পঞ্চব্রীহি পরিদর্শনে সিকৃবি শিক্ষার্থীরা

এক রোপনে পাঁচ বার ফলন দেওয়া পঞ্চব্রীহি ধানের ক্ষেতে পরিদর্শন করেন সিকৃবি শিক্ষার্থীরা
এক রোপনে পাঁচ বার ফলন দেওয়া পঞ্চব্রীহি ধানের ক্ষেতে পরিদর্শন করেন সিকৃবি শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবন করা এক রোপনে পাঁচ বার ফলন দেওয়া পঞ্চব্রীহি ধানের ক্ষেতে পরিদর্শন করেছে একদল শিক্ষার্থী। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা সফরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ও একজন সহকারী অধ্যাপকসহ ২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। 

আয়োজনের শুরুতেই বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানি ড. আবেদ চৌধুরী, বাড়িতে রাখা পঞ্চব্রীহি ধানের মডেল দেখিয়ে এ ধান চাষাবাদ, ফসল পরিচর্যা, কাটা এবং ফলন সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনা করেন। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের এ ধান সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়।

ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, বছরে বোরো মৌসুমে প্রথমবার রোপনের ১১০ দিন থেকে ১২০ দিন পর প্রথম বার ফসল কাটা হয়। পরবর্তীতে ৪৫ দিন পর দুইবার (৯০ দিনে) আউশে এ ধানের ফলন পাওয়া যায়। এর পরবর্তীতে আমনের সময় আরও দুবার ফলন পাওয়া যায়। 

এরপর প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান উপস্থিতিদের নিয়ে আলোচনা সভা শুরু করেন। আলোচনায় বক্তব্য দেন সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, কুলাউড়া কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাঈদা সুলতানা, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি রেজিস্ট্রার মো. ইয়াছিন আলী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শোয়েব আহমেদসহ অনেকে।

ড. আবেদ চৌধুরী ও সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান জানান, উষ্ণায়ন ও পরিবেশের বিরাট পরিবর্তনের কারণে আগামী ১০ বছরে খাদ্য উৎপাদন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে ভাবনায় পঞ্চব্রীহি ধানের চাষাবাদ অনেক কাজে আসবে। এটি এখন পরীক্ষামূলক আছে। আগামীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি  সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে।

আরো পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে ৫৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক বলেন, ‘আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান ড. আবেদ চৌধুরীকে। উনার এ উদ্ভাবন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা স্বপ্ন দেখি খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ হবার। আজকে এই শিক্ষাসফর শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখায় আগ্রহী করে তুলবে।’

প্রকল্পের ফিল্ড সুপারভাইজার তাহমিদ আনাম চৌধুরী বলেন, এ এলাকায় আমরা নতুন জাতের একাধিকবার ফলনশীল ধান নিয়ে কাজ করছি। আপনারা প্রতিনিয়ত এই কৃষি জমির দিকে লক্ষ্য করলে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবেন। এটা আপনাদের বিজ্ঞানকে জানা ও শেখার আগ্রহকে আরো ত্বরান্বিত করবে। সবশেষ, আপনারা সবাই বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবেন-সেই কামনা করি। 

পরে সরেজমিনে জমিতে রোপনকৃত পঞ্চব্রীহি ধানের ফলন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনের সময় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন আহমেদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ একটি বিরাট হুমকি। আমরা যদি পতিত ও কৃষি জমিতে সারাবছরের জন্য পঞ্চব্রীহি ধান লাগাতে পারি, তাহলে তা বায়ুমন্ডলের গ্রীণ হাউস গ্যাস শোষণ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ মোকাবেলায় বিরাট সহযোগিতা করবে।

বিডিওএসএন ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে উক্ত এলাকায় এ পর্যন্ত বোরো মৌসুমের দুইবার ফসল উত্তোলন করা হয়েছে এবং একই চারা হতে এ বছরের ৩য় ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান। ১ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়ান এইড। 


সর্বশেষ সংবাদ