আইন বিভাগে যারা পড়তে চান, তাদের জন্য জরুরি পরামর্শ
- মাহাথির আরাফাত
- প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ PM , আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ PM
সামাজিক মর্যাদা, চাকরির ক্ষেত্র ও স্বাধীনতার কারণে বর্তমানে আইন বিভাগে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক অসংখ্য শিক্ষার্থী। নিজের নামের আগে বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট পদবিগুলো দেখতে কার না ভালো লাগে! উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকার প্রথম সারির শিক্ষার্থীরা আইন পড়ার সুযোগ পায়। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের খুঁটিনাটি ও ক্যারিয়ার নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে তিনটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করে আইন অনুষদ তাদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে হলে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান তথা ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান অংশে বাধ্যতামূলক নম্বর পেতে হয়। বাংলায় ২১, ইংরেজিতে ২১ ও সাধারণ জ্ঞানে ১৮ পেতে হবে অবশ্যই। নম্বরের এই শর্ত পূরণ হলেই আইন বিভাগের একটা আসন দখল করা যায়। আইন বিভাগের আসন সংখ্যা ১১০টি। মানবিক শাখার জন্য ৫৫টি, বিজ্ঞান শাখার জন্য ৩৭টি এবং বাণিজ্য শাখার জন্য ১৮টি আসন বরাদ্দ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আলাদা সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রতি বছর প্রথম স্থান অর্জনকারীসহ ২০-২৫ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। আইন অনুষদের রয়েছে দুটি বিভাগ—আইন বিভাগ, আইন ও ভূমি প্রশাসন। আইন বিভাগে ১২০টি এবং আইন ও ভূমি প্রশাসনে ৫০টি—মোট ১৭০টি আসন রয়েছে। আইন বিভাগে পড়তে হলে মানবিক বিভাগ তথা ‘এ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। তবে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরাও ‘এ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারে। পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি অংশে আলাদা আলাদা ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। মেধাক্রমে যারা প্রথমে থাকে, তারাই আইন পড়ার সুযোগ পায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আইনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও খ্যাতি অনেক। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার যে কোনও শিক্ষার্থী ‘ডি’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে আইন পড়তে পারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের আসন ১১৫টি। এখানে শাখাভিত্তিক কোনও বিভাজন নেই। তিন শাখার যে কোনও শিক্ষার্থীই আসন লাভ করতে পারে। তবে বাংলায় ন্যূনতম ১০, ইংরেজিতে ১৫, আইকিউয়ে ৭, সাধারণ জ্ঞান/গণিত/অর্থনীতি যে কোনও তিনটা থেকে একটা উত্তর করে ৮ নম্বর পেতে হয়। এই শর্ত পূরণ না হলে আইন বিভাগে মনোনীত হওয়া যায় না। শর্ত পূরণ হলে ‘ডি’ ইউনিটের মেধা তালিকায় সেরা শিক্ষার্থীরাই আইন পড়তে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আইনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। সামাজবিজ্ঞান অনুষদ তথা ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে মোট আসন সংখ্যা ৬০টি। ছেলেদের জন্য ৩০টি ও মেয়েদের জন্য ৩০টি আসন ভাগ করা। ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ও বাংলা অংশে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। আসন সীমিত হওয়ায় তুলনামূলক ভালো পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকার প্রথমে থাকতে হয়।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়
আইনে পড়ার সুযোগ রয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেও। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়া যায়। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন আইন কলেজেও সুযোগ রয়েছে।
আইন বিভাগে যা পড়ানো হয়
এই বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে ‘জুরিসপ্রুডেন্স’, সাংবিধানিক আইন, মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, টর্ট আইন, চুক্তি আইন, ভূমি আইন, প্রশাসনিক আইন, কোম্পানি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, আয়কর আইন, বাণিজ্যিক আইন, সাইবার আইন, রেজিস্ট্রেশন আইন, পরিবেশ আইন, সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন আইন, ইক্যুইটি ট্রাস্ট, শ্রম আইন, অপরাধ আইন, দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন, রিয়েল এস্টেট আইন, সমুদ্র আইন, আন্তর্জাতিক সংগঠন, রিফিউজি আইন ও গুড গভর্নেন্সসহ আরও নানা বিষয়ে পড়ানো হয়।
ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্র
আইন বিভাগে পড়া মানেই কেবল আইনজীবী, বিচারক হওয়া নয়। গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত করে একজন শিক্ষার্থী বিসিএস, ব্যাংক, বিমা, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোনও চাকরিতে যোগ দিতে পারবে। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকরিতে আবেদনের যোগ্য, আইনের একজন শিক্ষার্থীও সেই সকল পদে আবেদন করতে পারবে অনায়াসে। বিজেএস, বার কাউন্সিল ও বিচার-সম্পর্কিত পদগুলো কেবল আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। একমাত্র আইন বিভাগে পড়লেই বিজেএস ও বিসিএস উভয় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়।
লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।