‘আণুবীক্ষণিক প্রশ্নে’ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, অসন্তোষ শিক্ষার্থীদের

২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের প্রশ্ন
২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের প্রশ্ন  © ফাইল ছবি

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের ‘আণুবীক্ষণিক প্রশ্ন’ নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর অনেকে। তারা বলছেন, প্রশ্ন শর্টকাটে সমাধান করার জন্যে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা এমনিতে দুঃশ্চিন্তায় থাকে। তার মধ্যে এমন ‘গাদাগাদি’ প্রশ্ন তাদের মাথায় বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ তাদের। শনিবার (২৭ এপ্রিল) গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ করেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালের গুচ্ছের পরীক্ষার সময় থেকেই আণুবীক্ষণিক টাইপের প্রশ্ন করছে গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ। ঘিঞ্জি ধরণের এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের সঠিক উত্তর বাছাই করতেও কষ্ট হয়। অনেকের একটা প্রশ্ন পড়ে আরেকটা প্রশ্নের উত্তরে চোখ চলে যায়। ফলে অনেক জানা প্রশ্নের উত্তরও ভালোভাবে করতে পারেননি। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুচ্ছের পরীক্ষার্থী নাফিউর রহমান বলেন, ‘আমার যে সেট পড়ছে, সেখানে ৭ নম্বর প্রশ্নটা চোখেই পড়েনি। বাসায় এসে দেখি, এতো সহজ প্রশ্ন বাদ দিয়ে আসছি।’ ভর্তি পরীক্ষার্থী ফুয়াদ ফারহান লিখেছেন, ‘কিছু কিছু প্রশ্ন চোখেই পড়েনি। নিকৃষ্ট এক্সাম সিস্টেম। ফিজিক্সে যে ম্যাথ দিছে, ক্যালকুলেটর ছাড়া কিছু কিছু ম্যাথ করা অসম্ভব। প্রশ্নের জায়গার অভাব হতাশাজনক। সর্বোচ্চ ফি দিয়ে আণুবীক্ষণিক প্রশ্নে পরীক্ষা দিলাম।’

‘এ’ ইউনিটের চাপাচাপি প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়ে দেখাটাও কষ্টকর। দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের এরকম গাদাগাদি সাইজের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? অধচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও পিনআপ করে পরীক্ষা নেয়। কোয়ালিটি যেমনই হোক, এতো চাপাচাপি প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা সমাধান করবে কোথায়? এ প্রশ্ন সহজ হলেও কঠিন লাগবে শিক্ষার্থীদের কাছে।

শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যত নিয়ে গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো এবারও উদাসীন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য অ্যাডমিশনের থেকে গুচ্ছ পরীক্ষার ফি বেশি। সেখানে প্রশ্নের কাগজের মান খুবই খারাপ। প্রশ্নের গুণগত মান ও ডেকোরেশন সিস্টেম বাজে হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা একটা প্রশ্নের উত্তরের জায়গায় আরেকটা প্রশ্নের উত্তরে দিয়ে আসছে। 

এছাড়া বিগত বছরের প্রশ্নের ধরনের সঙ্গে পরবর্তী বছরের প্রশ্নের ধরনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়- যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের ধরন পরবর্তী বছরের প্রশ্নের ধরনের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকে। গুচ্ছের ক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রম। 

ব্যাটলস অফ বায়োলজি প্রতিষ্ঠাতা সাদিকুর রহমান সাদাব বলেন, ‘এ’ ইউনিটের চাপাচাপি প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়ে দেখাটাও কষ্টকর। দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের এরকম গাদাগাদি সাইজের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? অধচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও পিনআপ করে পরীক্ষা নেয়। কোয়ালিটি যেমনই হোক, এতো চাপাচাপি প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা সমাধান করবে কোথায়? এ প্রশ্ন সহজ হলেও কঠিন লাগবে শিক্ষার্থীদের কাছে।

সার্বিক বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা ছোট অক্ষরে লেখা হয়েছে, গত তিন বছরের তুলনায় এবারের প্রশ্ন বেশি পাঠযোগ্য ও সুন্দর হয়েছে। সিলেবাসের বাইরে প্রশ্নে অমিল থাকতে পারে, এখানে সিলেবাসের মধ্যে হয়। একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকে। এখানে পাস-ফেলের ব্যাপার না। এখানে সবাই ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে আসছে। আমার ২১ হাজার সিট আছে, আর শিক্ষার্থী আছে দেড় লাখের বেশি। এখান থেকে যোগ্য ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে আমাকে বের করে আনতে হবে। প্রশ্ন সবার জন্য সমান।’

অল্প কাগজ ব্যবহারের জন্য এমন প্রশ্ন করেছেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক লাখ ৭০ হাজার প্রশ্ন আরো জায়গা দিয়ে করতে হলে আলাদা করে পিনআপ করতে হবে। এ প্রশ্ন সর্ম্পূণ তৈরি করতে ১৫ দিন সময় লাগছে। ১০ জন শিক্ষক ১৫ দিন ধরে এক জায়গায় ঘুমিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আজীবন অভিযোগ করবে। রিলেটিভ যোগ্যতার পরীক্ষা এটি। যে শিক্ষার্থী যোগ্য সে বেশি নম্বর পাবে।

‘এ’ ইউনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫৩ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। মূল কেন্দ্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ জবির অধীনে আরও পাঁচটি উপ-কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২ হাজার ৫৭৯ জন, ঢাবিতে ২৫ হাজার ২৯৬, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে তিন হাজার, সরকারি বাংলা কলেজে ছয় হাজার ৭৪০, ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে তিন হাজার ২০০ এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে পরীক্ষা দিয়েছেন তিন হাজার পরীক্ষার্থী।

আরো পড়ুন: গুচ্ছের বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা

গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুলনা), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোয়াখালী), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুমিল্লা), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যশোর), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (বরিশাল), রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাঙামাটি), রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (সিরাজগঞ্জ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (গাজীপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোণা), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পটুয়াখালী), কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কিশোরগঞ্জ), চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁদপুর), সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুনামগঞ্জ) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিরোজপুর)।

গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষা ৩ মে (শুক্রবার) এবং ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১০ মে (শুক্রবার)। ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হলেও অন্য দুটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence