গুচ্ছে বন্ধ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন
ভালো বিশ্ববিদ্যালয়-সাবজেক্ট পাচ্ছেন কম মার্কস পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা
অপেক্ষমান তালিকার ভর্তি কার্যক্রম
- মুনতাসির রহমান মাহির
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৫ PM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:২০ PM
মো. রিফাত হোসাইন। তার স্বপ্ন ছিল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিলেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৬০ নম্বর পেয়ে। কিন্তু রিফাতের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভালো সাবজেক্ট পাননি। অথচ তার চেয়ে কম নম্বর পেয়ে নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পাচ্ছেন অপেক্ষমান তালিকার ভর্তিচ্ছুরা।
রিফাত জানান, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি নম্বর পেয়েও তিনি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। অথচ তার চেয়ে কম নম্বরধারীরা অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পাবেন।
শুধু রিফাত নন; বেশি নম্বর পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো সাবজেক্ট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অবিলম্বে আন্তঃবিশ্ববিদ্যাল মাইগ্রেশন চালু করে বেশি নম্বরধারীদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আবেগের বসে অনেকে অনেক অভিযোগ করতে পারেন। তবে আমাদের বাস্তবতা দেখতে হবে। বাস্তবতা এটাই, আসন পূরণ করতে হলে মাইগ্রেশন বন্ধের বিকল্প নেই। -গুচ্ছ ভর্তি কমিটি
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি বলছে, ভর্তিচ্ছুদের পছন্দক্রম এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একাধিকবার আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মাইগ্রেশনের ফলে খারাপ সাবজেক্ট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে তুলনামূলক ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন অন রেখেছিলেন। যার ফলে অনেকে নিজ বাড়ি থেকে দূরের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তুলনামূলক কম শিক্ষার্থী রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছেন। এর দায় সম্পূর্ণ ভর্তিচ্ছুদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির এক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ কর হয়েছে। ফাঁকা আসন পূরণ এর মধ্যে অন্যতম। মাইগ্রেশন চালু রাখলে ফাঁকা আসনগুলো কখনোই পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, আমরা আর কতগুলো মাইগ্রেশন দেব? অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সামনে তাদের মিডটার্ম পরীক্ষা। দ্রুত আসন পূরণ করে ফাঁকা আসনগুলো পূরণ করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমে প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে শ্রেণি পাঠদান শুরু করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণি পাঠদান শুরু হলেও কিছু আসন ফাঁকা থাকায় শুরু হয় জটিলতা। ভর্তিচ্ছুদের পক্ষ থেকেও এ আসনগুলো পূরণের দাবি ছিলো। এরপর এ আসনগুলো পূরণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ফাঁকা আসনগুলোর প্রায় বেশিরভাগ আসনই পূরণ হয়ে গেছে। অল্প যে কিছু আসন ফাঁকা রয়েছে সেগুলো নিয়ে আগামী সোমবার বৈঠকে বসবে গুচ্ছ কমিটি।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন প্রত্যাশী ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষায় তাদের কারো প্রাপ্ত নম্বর ৬৫, কারো আবার ৫৫। ভালো নম্বর পেয়েও তারা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পাননি তারা। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু থাকলে এই নম্বর দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট পাওয়া পেতেন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেন অনাগ্রহ, কেন আগ্রহ?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৫৭ নম্বর পেয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন আমিনুল (ছদ্মনাম)। জবির আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। তবে মাইগ্রেশন বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ হচ্ছে না। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আর দুটি মাইগ্রেশন হলে আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেত। তবে গুচ্ছ কমিটির হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে সেই সুযোগ আর হচ্ছে না।
আহমেদ আহসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গুচ্ছ অধিভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২০০ সিট ফাঁকা থাকার পরও কোনো নতুন মাইগ্রেশন দিচ্ছে না। এতে করে আমরা যারা ভালো একটি ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার যোগ্য তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের মাইগ্রেশন না দিয়ে তারা এখন কোথাও সিট না পাওয়া শিক্ষার্থী দিয়ে ২২০০ সিট পূরণ করতে চাচ্ছে। আমরা যারা সিট পাইছি তাদের থেকে যারা সিট পাইনি তাদের নম্বর কম। অথচ গুচ্ছের এই নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা বিভিন্ন জায়গায় ভালো ভালো সাবজেক্ট পাবে। যেগুলো আমাদের পাওয়ার কথা ছিল।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি নম্বর পেয়েও তিনি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। অথচ তার চেয়ে কম নম্বরধারীরা অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পাবেন। -মাইগ্রেশন প্রত্যাশী শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগে ভিত্তিহীন দাবি করে গুচ্ছের কোর কমিটির এক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আবেগের বসে অনেকে অনেক অভিযোগ করতে পারেন। তবে আমাদের বাস্তবতা দেখতে হবে। বাস্তবতা এটাই, আসন পূরণ করতে হলে মাইগ্রেশন বন্ধের বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজারের অধিক আসন ফাঁকা রয়েছে। তুলনামূলক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। আমাদের মতো দেশে যেখানে সবারই স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার; সেখানে আসন ফাঁকা রাখা সমীচীন হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণ করতে ভর্তির এই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। তাছাড়া অনেকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। যার ফলে প্রতিবছর গুচ্ছে প্রচুর আসন ফাঁকা থাকে। ফাঁকা আসনগুলোতে ভর্তি কমিটি অপেক্ষমান তালিকার ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি নিচ্ছেন।