থেমে নেই ‘প্রশ্নফাঁস প্রতারক’ চক্রের তৎপরতা, কঠোর মন্ত্রণালয়

ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে প্রতারক চক্র
ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে প্রতারক চক্র  © প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আজ থেকে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আগে থেকে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে রয়েছে কঠোর নজরদারি। এরপরও ফেসবুককেন্দ্রীক বিভিন্ন গ্রুপ ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এসেছে। এগুলো পুরোপুরি প্রতারণা জানিয়ে এরকম কয়েকটি গ্রুপ নজরদারিতে থাকার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কঠোর নিরাপত্তার কারণে প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেই। তবে প্রশ্নফাঁস করা কঠিন হলেও গুজব ছড়ানো সহজ। শনিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রশ্নফাঁসের কোনও সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেছেন, কেউ গুজব রটিয়ে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, ফেসবুকে অন্তত চারটি এমন গ্রুপ বা পেজের তথ্য মিলেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তথ্য দেওয়া হয়েছে। একটি গত ১৯ এপ্রিল খোলা দুটি পেজে বলা হয়েছে, প্রশ্ন কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। পরীক্ষার এক দিন আগে প্রশ্ন দেওয়া হবে। বিশেষ প্রয়োজনে আগে নিলে দাম কম-বেশি হবে।

এভাবে প্রশ্ন দিতে অগ্রিম টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। আরেকটি গ্রুপে অগ্রিম টাকা ছাড়াই ফাঁসকৃত প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কমন পড়লে টাকা দেওয়ার কথা বলেছে তারাঁ। তবে এ জন্য প্রবেশপত্রের ছবিসহ অন্যান্য তথ্য চাওয়া হয়েছে। এটি প্রতারণা ছাড়া কিছু নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগের রাতে এসএসসি প্রশ্ন ফাঁস করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ একাধিক সেটের মধ্যে কোন সেটে পরীক্ষা হবে তা ঠিক হবে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে। সেট কোড সচিবকে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলবেন। সংশ্লিষ্ট কেউ স্মার্টফোনও ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব সাধারণ ফিচার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে প্রশ্নফাঁস সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি সব গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বিটিআরসিও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারপরও এমন তথ্য পেলে জানাতে বলেন তিনি।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন নজরদারি করছে বিটিআরসি। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারাও তদারকি করছেন। দ্রুত বন্ধ করা হবে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজগুলো।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে যে কোনো ধরনের গুজব, অনৈতিকভাবে তথ্য সরবরাহ বা আর্থিক লেনদেন নজরদারিতে রাখা হবে। জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটি সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের গুজব বা অপতৎপরতা সৃষ্টিকারী চক্রগুলোর কার্যক্রম বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের জোর নজরদারি থাকবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীর কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

ডা. দীপু মনি আরও বলেন, যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অংকের অর্থ সন্দেহজনকভাবে লেনদেন হয়, তবে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ওসিকে অবহিত করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ