জাবিতে ‘রাতারাতি’ রেজিস্ট্রার নিয়োগ চেষ্টা ব্যর্থ, বোর্ড স্থগিত
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২২, ০৪:১৭ PM , আপডেট: ২৬ জুন ২০২২, ০৫:০৭ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তড়িঘড়ি করে এবং নিয়ম না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগে রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড বসার নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা আগে তা স্থগিত হয়েছে।
রোববার (২৬ জুন) বিকেল ৩টার দিকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ওইদিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে "জাবিতে 'রাতারাতি' রেজিস্ট্রার নিয়োগের চেষ্টা " শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়াও দুজন প্রার্থী রোববার দুপুর ১২টায় উপাচার্য বরাবর অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড’ বাতিলের আবেদন করেন। এরপর নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।
অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর বলেন, ‘সিলেকশন কমিটিতে চ্যান্সেলর মনোনীত দু’জন সদস্য না থাকা, বোর্ড বসার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কল করা এবং একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত দুজন সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজকের এই বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রারের পদ অধ্যাপকের পদের সমান। এ ধরনের মিটিং সাধারণত প্রার্থীদের তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে ডাকা হতো। অপরিপক্কভাবে মিটিং কল করার কারণে এ ইন্টারভিউ বোর্ডটি বাতিল হয়। এটা আসলে দুঃখজনক।’
এর আগে, পছন্দের প্রার্থীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় নিয়োগ বোর্ড বসার কথা থাকলেও প্রার্থীরা জানতে পারেন মাত্র ৬ ঘণ্টা আগে। তাছাড়া বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিজেই এ পদের একজন প্রার্থী হয়ে ইন্টারভিউ কল চিঠি ইস্যু করেছেন।
সমকাল পত্রিকায় গত বছরের ৫ জুন প্রকাশিত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি থেকে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টোর) তাজনাহার বেগম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ( উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি-২) ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ( কাউন্সিল) বি এম কামরুজ্জামান। এদের মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমান মুকুল আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত হজের জন্য ছুটিতে রয়েছেন।
অভিযোগ জানানো জ্যেষ্ঠ প্রার্থীর আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আমি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একটি পত্র পেয়েছি। নিয়োগ পরীক্ষার দিন ইন্টারভিউ কার্ড দেওয়া প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয়। তাছাড়া প্রায় এক বছর আগে আহুত বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ পরীক্ষা এতদিন পর আহ্বান করাও বিধেয় নয়। উপরন্তু, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় সময়টুকুও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অনেকটা গোপনীয়তার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান আহ্বান করা হয়েছে।’
আবেদনপত্রে তিনি দাবি করেন, ‘ইন্টারভিউ কার্ড যিনি ইস্যু করেছেন তিনি নিজেও একজন প্রার্থী। আরেকজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনিও একজন প্রার্থী। তারা যথাযথ প্রস্ততি নিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। কিন্তু আমি তা পাইনি। তাই আমার পক্ষে আজকের ইন্টারভিউ বোর্ডে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।’
আরেকজন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ করে নিয়োগ বোর্ডর খবর শুনে আমি অত্যন্ত অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। গত সিনেট সভায় সব সেশন বেনিফিট (চাকরির মেয়াদ) বাতিল হয়। তাহলে দুদিন পর সেশন বেনিফিট বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে রেজিস্ট্রারের পদোন্নতি রেগুলার করা সম্ভব? সেশন বেনিফিট বাতিলের দুদিন পর এই বোর্ড স্ববিরোধী।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের প্রথম স্ট্যাটিউটসের ২২ ধারা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ৮ সদস্যের একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হয়। যার প্রধান হন উপাচার্য। এই বোর্ডে উপাচার্য ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল থেকে মনোনীত দুজন, সিন্ডিকেট থেকে মনোনীত দুজন, আচার্য কর্তৃক মনোনীত দুজন ও উপাচার্য মনোনীত একজন সদস্য থাকেন।
নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্যের মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সিন্ডিকেট মনোনীত সদস্য হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ।
এছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম। একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত এ দুই সদস্যদের মেয়াদ আজ শেষ হয়েছে।
কতদিন আগে একাডেমিক কাউন্সিলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি বোর্ডের মেম্বার। আসলে কতদিন আগে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা মনে নেই। করোনা শুরুর আগে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, হতে পারে। তা আমি বলতে পারছি না। আর মাত্র ৩ দিন পর আমার এলপিআর শুরু হচ্ছে।
প্রার্থী নিজেই চিঠি ইস্যু করা এবং ২৪ ঘন্টার ও কম সময়ে বোর্ড আহ্বান করা নিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমার নিয়মকানুন জানা নেই। কাগজপত্র দেখতে হবে। আর আমরা যখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ডে যাই তখন তো মিনিমাম ৭ দিন আগে জানায়। তবে তিনি মনে করেন মেয়াদ শেষে এক ঘন্টা আগেও এটা করতে বাধা নেই।