কুয়েট শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৫:২৬ PM , আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৬:১৬ PM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী অন্তু রায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এক ঘন্টা অবরোধের পর শিক্ষার্থীরা নিজ থেকেই অবরোধ তুলে নেন।
আরও পড়ুন: হৃদয় মণ্ডলকে মুক্তি না দিলে আমাকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয়
গত ৪ এপ্রিল খুলনার ডুমুরিয় উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কুয়েট শিক্ষার্থী অন্তু রায়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় নিজ ঘর থেকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বকেয়া ফি-র টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে অন্তু রায়। এই দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে জানান তারা।
অবরোধ চলাকালীন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, একদিকে এই রাষ্ট্র উন্নয়নের ডামাডোল পিটাচ্ছে অন্যদিকে উন্নয়নের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নানা শ্রেনি পেশার মানুষ। একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে রিকশাচালক জরিমানা দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছে আরেকদিকে অতিরিক্ত ফি-র জাঁতাকলে আত্মহত্যা করছে শিক্ষার্থীরা। এই যে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার মিছিল এটি রাষ্ট্রের ভঙ্গুরতার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার, এটি রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এই মৌলিক অধিকার কোনও শিক্ষার্থী বহন করবে না। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর সুষ্ঠু জীবন নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের খাদ্যে পুষ্টির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা অন্তু রায়ের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্নভাবে মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করছে শিক্ষাব্যবস্থা শুধুমাত্র উচ্চ শ্রেনীর লোকদের জন্য। এটি স্বাভাবিক শিক্ষাব্যস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কুয়েটে অন্তু রায় আত্মহত্যা করেছে, আবার দেখা যাবে অন্য বিশ^বিদ্যালয়েও আরেকজন আত্মহত্যা করেছে। আশা করব রাষ্ট্র আশু ব্যবস্থা নিবে এ্ই সমস্যা সমাধানে, সামনে যেনো এরকম পরিস্থিতি আর না হয়।
ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, একদিকে সমস্তকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে সরকার উন্নয়নের গল্প শুনাচ্ছে। সেই উন্নয়নের জাঁতাকলে পরে কুয়েট শিক্ষার্থী তার ফি দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। কত বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি; একজন প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ফি দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। এটি এই রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফি এমন করে বাড়ানো হচ্ছে যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চান্স পেলেও পড়তে পারবে না। এরকম ফি দিতে না পেরে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে রাগে-ক্ষোভে আত্মহত্যা করছে। ১৩ বছরের দুঃশাসনের এই পরিণতি আজকে বাংলাদেশের। প্রতিনিয়ত বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে নামে-বেনামে ফি বাড়ানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: একে একে ৪টি পার, পঞ্চম বিসিএসে ম্যাজিস্ট্রেট শামীম
তিনি আরও বলেন, কুয়েটে ডাইনিংয়ে না খেলেও ডাইনিং ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে, সাভারে একজন রিকশাচালককে পুলিশ বিশ হাজার টাকা জরিমানা করলে রাগে-ক্ষোভে উপার্জনের কোনও পথ না পেয়ে ঐ রিকশাচালক আত্মহত্যা করেছে; শরীয়তপুরে একজন শিক্ষার্থী দু’শ টাকা ফি-র জন্য আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটছে।
রাকিব বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এত বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে, কিছুদিন পর দেখা যাবে পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। গত ১৩ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনও অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন হলে ছাত্রলীগ লেলিয়ে দেওয়া এইসব জঘন্য অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। কুয়েটের শিক্ষার্থী অন্তু রায়ের মতো আরেকজন শিক্ষার্থীর যদি আত্মহত্যার দিকে যেতে হয় তাহলে আমরা সকলে একসাথে এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো। স্বৈরাচার আইয়ুব-এরশাদকে ছাড়িয়ে গেছে এই শেখ হাসিনা। শিক্ষাক্ষেত্রের ফি বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ না করলে আইয়ুব-এরশাদের মতো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না দেশ থেকে পালানোর।
মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) জেফরুল হাসান চৌধুরি সজল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে রাখে। আমি বিষয়টি বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করি এবং শিক্ষার্থীদের সাথেও কর্তৃপক্ষের কথা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা নিজ থেকেই অবরোধ তুলে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, যারা মহসড়ক অবরোধ করেছিলো আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম মহসড়ক ছেড়ে দিতে। রমজান মাসে মানুষজনের কষ্ট যেনো না হয়। শিক্ষার্থীরাও আমার কথা রেখেছে, তারাও তাদের কার্যক্রম শেষ করে নিজ থেকেই অবরোধ উঠিয়ে নেয়।