ঢাবির ১৫০ গণরুমের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের

গণরুম, ঢাবি ও ছাত্রলীগের লোগো
গণরুম, ঢাবি ও ছাত্রলীগের লোগো  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের গণরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ বেশ পুরোনো। প্রায় সবগুলো নির্যাতনের ঘটনার সাথেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সম্পৃক্ততা। হলগুলো থেকে গণরুম সরানোর নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

শিক্ষার্থীদের গণরুমের নির্যাতন থেকে পরিত্রান দিতে গণরুম বন্ধে উদ্যোগ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি নিয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় হল খোলার আগে গণরুম সংস্কৃতি বাতিল করার কথা বলা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তখন ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগও নানা ফুলঝুড়ি শুনিয়েছিল। তবে সবগুলো হলের গণরুম এখনও তাদেরই নিয়ন্ত্রণে।

গত বছরের ১০ অক্টোবর ঢাবির আবাসিক হলগুলো খোলার পর বিভিন্ন হলের গণরুমে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। সবশেষ গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের হাতে বিজয় একাত্তর হলের এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের চিত্রই ফুটে উঠেছে।

ঢাবির ১৮টি হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই হলগুলোতে প্রায় দেড় শতাধিক গণরুম রয়েছে। যার সবগুলোই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। কোন কোন হলে ১০টিরও বেশি গণরুম আছে। গণরুম সংস্কৃতি বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: একাধিক সাক্ষাৎকারেও যোগ্য শিক্ষক পায়নি সংস্কৃত-উর্দু বিভাগ

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাবির ১৮টি হলের কমবেশি সবগুলোতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। তবে বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং বঙ্গবন্ধু হলে গণরুম সংস্কৃতি বেশি দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণরুমের এক শিক্ষার্থী জানান, অনেক আশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। আর এখন গণরুমের কারণে আমার সে আশা ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। জায়গার সংকটের জন্য প্রায় রাতে মসজিদে ঘুমাতে হয়। এছাড়া বড় ভাইদের অত্যাচার তো আছেই।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়মিত থাকতে হয়। না হলে রাতে আবার গেস্ট রুমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এভাবে আমাদের ক্লাস, পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বণ্টন করতে না পারায় ছাত্রলীগের বেঁধে দেওয়া নিয়মে শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে থাকতে হচ্ছে। শুধু থাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়।

এছাড়া প্রতিদিন রাতে নিজ নিজ হলের গেস্টরুমে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের কথিত ‘শিষ্টাচার’ শেখান। এসব কথিত ‘শিষ্টাচার’ শিখতে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গেস্ট রুমে থাকতে হয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘শিষ্টাচার’ শেখানোর জন্য থাকে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রলীগের কর্মী। যা ছাত্রলীগের ভাষায় ‘চেইন অব কমান্ড‌’ বলে পরিচিত।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করলে ব্যবস্থা: সাদ্দাম

কিন্তু শিষ্টাচার শেখানো প্রায়ই যন্ত্রণা ও নির্যাতনে রূপ নেয়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক ও শারীরিক বা উভয়ভাবেই দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু হল প্রশাসন ভুক্তভোগীদের দুর্দশার দিকে খুব কমই কর্ণপাত করে। আসন বণ্টন নিয়ে গত ৪ মাসে হলগুলোতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ১০টির বেশি ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণরুম বিষয়ে তার অভিমত জানতে চাইলে তিনি এই কালচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমরা গণরুম চাই না। এর কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা চাই এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিট দেয়া হোক।

আরও পড়ুন: হলে আখতারের উপর ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

এ বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা গণরুম বন্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার হলে তিনটা গণরুম ছিল। এখান থেকে ২টা উদ্ধার করেছি। আর ১ টা আছে সেটাও সিট দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। অন্যান্য হলেও এটা বন্ধে কাজ চলছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামনের বছর থেকে সিট সংখ্যা কমানোর; এতে আশা করি আর গণরুম থাকবে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গণরুম বন্ধে প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কাম্য।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence