ডাকসু ছাত্রলীগ প্যানেলের উদ্যোগে ১০০ শিক্ষার্থী পেল বাইসাইকেল

টিএসসিতে সাইকেল বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়
টিএসসিতে সাইকেল বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়  © সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৯-২০ সেশনের ১০০ জন ‌দরিদ্র শিক্ষার্থীর মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক ছাত্রলীগ প্যানেল।

আজ সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এই বাইসাইকেল বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। নাভানা গ্রুপের অর্থায়নে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড মো. আখতারুজ্জামান।

ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এসময় নাভানা গ্রুপের সিইও ওয়াহেদ আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যখন দুস্থদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেকে যখন দেখি অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে নিয়ে অসুস্থদের মাঝে পৌঁছে দেয়, যখন দেখি তারা ধান ক্ষেতে গিয়ে ধান কেটে মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেয়, যখন দেখি করোনাকালীন অসুস্থদের মাঝে তারা খাবার বিতরণ করে; তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজারের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলি- যেই স্বপ্ন নিয়ে তুমি ছাত্রলীগকে গঠন করেছিল, সেই ছাত্রলীগ আজ মানুষের জন্য কাজ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বলে ভ্যাকসিন হিরো। তাকে বলে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ, মাদার অফ হিউম্যানিটি। ২০০৮ সালে বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। একটানা তিন তিনবার তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ৬৮০০০ অন্ধকার গ্রামকে আলোকিত করেছেন। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার তীরের লক্ষ কোটি মানুষের মুখে তিনি ভাত তুলে দিয়েছেন। বস্ত্রহীন মানুষকে বস্ত্র দিয়েছেন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দিয়েছেন। এমনকি তিনি তার জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত আছেন।

বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা শব্দের পূর্বে মুক্তির কথা বলেছেন। এর কারণ তিনি অর্থনৈতিক মুক্তি,রাজনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক মুক্তি সর্বোপরি সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই মানুষের মুক্তির স্বাধীনতার স্বপ্ন থমকে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার এগিয়ে চলছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।

এসময় তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে অতীতের ন্যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গৌরবোজ্জ্বল ও অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো.আখতারুজ্জামান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭০ সালে যখন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল তখন তিনি প্রায়শ যখন ৬ দফাকে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বক্তৃতার ছলে একটি কথা বলতেন। তিনি বলতেন, পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী তাদের কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা নির্বাচনের ওয়াদা দিয়ে বারবার ভঙ্গ করেছে।

“কিন্তু সাদ বিন কাদের চৌধুরী তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রেখেছে। সেজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেই। কারণ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা একটি মূল্যবোধ। এক্ষেত্রে সাদ ও তার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের প্রতিশ্রুতি রেখেছে। মুজিব শতবর্ষে ১০০ বাইসাইকেল প্রদান করা একটা মাইলফলক। ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস যা ঢাবির মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ২০২০ সালের ৩০ মার্চ আমাদের এ কর্মসূচির তারিখ থাকলেও কোভিডের নানা ঘাতপ্রতিঘাতের কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি। ডাকসুর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমরা চেয়েছিলাম সময়ের গন্ডিতে বেঁধে না রেখে শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত বাইসাইকেল তুলে দিতে। কিন্তু একটি বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে আমরা এ বাইসাইকেল নেওয়ার কথা থাকলে বিভিন্ন কারণে তারা আর এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়বদ্ধতা থেকে সবার একান্ত প্রচেষ্টা ও নাভানা গ্রুপের সহায়তায় আমরা আজকের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রসঙ্গত, মোট ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী বাইসাইকেলের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ভাইভার মাধ্যমে প্রায় ২২০ জন শিক্ষার্থীকে বিচারক প্যানেল প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেন। এই ২২০ জন শিক্ষার্থী থেকে লটারি ড্র এর মাধ্যমে ১০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ