জুলাই আন্দোলনে গুলি-হামলা
ঢাবির তৎকালীন প্রশাসনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে বর্তমান প্রশাসন?
- মোফাচ্ছের এইচ ইমরান
- প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৯ PM , আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৯ PM

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেওয়ার শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্দোলনকারীদের উপর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলার মধ্য দিয়ে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং বহিরাগত নেতাকর্মীরা একযোগে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন।
জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নানাভাবে সহযোগিতা করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়াও আন্দোলন দমন করতেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে দেয় এবং তাড়া খেয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয় প্রশাসন। মূলত প্রশাসনের নির্দেশে ক্যাম্পাসে পুলিশের নির্যাতন বেড়ে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান উপাচার্য। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আতঙ্ক সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে যেতে বাধ্য করা এবং পরবর্তীতে এর জন্য ধন্যবাদ জানানো ছিল শিক্ষার্থীদের সাথে চূড়ান্ত উপহাস।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত তৎকালীন প্রশাসনে থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও অধিকাংশ রিপোর্ট এখনো জমা পড়েনি। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন— এই উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে?
জানা গেছে, ১৬ জুলাই কোনো সংঘর্ষ না ঘটলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হকিস্টিক, স্ট্যাম্প ও লাঠি নিয়ে টিএসসি এলাকায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরাও শহীদ মিনার এলাকায় কাঠ ও লাঠি হাতে অবস্থান করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাব মোতায়েন করে। পরে ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে আবু সাঈদের গায়েবানা জানাজার পর শিক্ষার্থীরা টিএসসি অভিমুখে কফিন মিছিল বের করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এসময় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুলি চালায়। ঠিক একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলোয় কড়া নিরাপত্তায় দফায় দফায় বৈঠক করছিলেন।
পুলিশ যখন হল পাড়ার ভাবনা চত্বর পর্যন্ত ধাওয়া করে তখন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন নারী শিক্ষার্থীরা। ওই সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হতে চাইলে বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটে ছাত্রলীগ অবস্থান নেয় এবং আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে।
এদিকে সরকার পতনের পর শিক্ষক বর্জনের মুখে পড়েন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যাদের মধ্যে ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার ও অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, এবং প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির শিক্ষকরাসহ আরও অনেকেই।
এই প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোতে চাই। তাহলে এর একটা আইনি ভিত্তি থাকবে। কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে টার্গেট করে কিছু করা হবে না। বিভাগ ভিত্তিক যে-সব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। ভিন্ন ভিন্ন কমিটি করেছি। কয়েকটা কমিটির রিপোর্ট চলে এসেছে। বাকিগুলো এখনও বাকি।
নির্দিষ্ট করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সার্বিক একটা কমিটি রয়েছে। আমরা নিজের থেকে কিছু না করে সার্বিক কমিটিকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। ওই কেইসগুলোর পাশাপাশি কিছু কিছু কেইস নিয়ে তারা কিছু তথ্য নিবেন। আমরা চেষ্টা করবো তারা যেন কাজটা তাড়াতাড়ি করে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘যারা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে, কিছু রিপোর্ট সিন্ডিকেটেও উঠেছে।’
কোটা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চব্বিশের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তৎকালীন ঢাবি প্রশাসনের ভূমিকা ছিল অতিমাত্রায় প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনেছিলেন তৎকালীন ভিসি। তিনি গুলি চালানোরও অনুমতি দিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন প্রক্টরের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত এনে হামলা করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। উপায়ন্তর না দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিতাড়িত ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করতে, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে হল- ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। এত মাস পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে নাই। এটা দুঃখজনক, একইসাথে অশনিসংকেত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেরিতে হলেও আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুন, নির্যাতনে মদদদাতা, খুনির দোসরদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। সার্বিক কাজ মোটামুটি সম্পন্ন, কয়েকদিনের মধ্যেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।