স্বৈরাচারের মোটিফে আগুন

মুখে মাস্ক, হাতে দাহ্য পদার্থ—ফিল্মি স্টাইলে ৩ মিনিটেই শেষ চারুকলার মিশন

চারুকলায় ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি
চারুকলায় ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি  © ফাইল ফটো

মুখে মাস্ক পরে, হাতে দাহ্য পদার্থ নিয়ে চারুকলার বন্ধ ফটক টপকে ভেতরে ঢুকে এক ব্যক্তি। এরপর স্বৈরাচারের মোটিফে তরল পদার্থ ছিটিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন পুরোপুরি ধরেছে কিনা নিশ্চিত হতে একটু দূরে গাছের অন্ধকারে কিছু সময় অপেক্ষা করেন ওই ব্যক্তি। ভালোভাবে আগুন জ্বলে ওঠার পর আবারো একইভাবে ফটক টপকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনাটি ঘটে মাত্র তিনি মিনিটে। এর মধ্যেই ফিল্মি স্টাইলে চারুকলায় আগুন দেওয়ার মিশন কাজ শেষ করেন ওই দুর্বৃত্ত।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন দেওয়ার এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোটামুটি নিশ্চিত আগুন লাগিয়েছে একজনই। তবে তার মাস্টারমাইন্ড কারা তা তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

আগুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং শাহবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।

এবারের বর্ষবরণে একটি প্যান্ডেলে পাশাপাশি চারটি মোটিফ তৈরি করছিলেন ডিজাইনাররা। ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির মোটিফটিকে লক্ষ্য করেই আগুন দেওয়া হয়। তার পাশে থাকা শান্তির প্রতীক পায়রার অর্ধেক পুড়েছে। 

এ ঘটনায় ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পরা ও পেছনে চুলে ঝুঁটি করা একটি ছেলে চারুকলার তিন নম্বর গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে মোটিফের গায়ে লিকুইড ঢেলে দেয়। তারপর পর্দার আড়ালে গিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে একই পথে ছবির হাটের দিকে পালিয়ে যায়। 

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ মনে করেন, ফ্যাসিবাদী পক্ষের কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের একটা শক্তি এখানে ঘাপটি দিয়ে আছে। তারাই এই কাজ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি। 

এদিকে আগুনের ঘটনায় ঢাবির এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, নববর্ষের শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রায়’ কীভাবে আগুন লাগল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ আলামত সংগ্রহ শুরু করেছে।

তবে এর মধ্যেই আবারো স্বৈরাচারের মোটিফটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে তিনি চারুকলার প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পরিদর্শনকালে এ কথা জানান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেখানে বাধা এসেছে। এ ধরনের কাজে বাধা আসেই, ষড়যন্ত্র থাকে। তবে মানুষের পরিশ্রম আর আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাবো, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে। এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা এখন একটি জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি এবং চাই সবাই আমাদের পাশে থাকুক।’


সর্বশেষ সংবাদ