ঢাবি ছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’: বন্ধুরা বলছে নেপথ্যে প্রেম, উল্টো দাবি বুটেক্স ছাত্রের পরিবারের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোগো ও শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোগো ও শিক্ষার্থী  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে আনিকা মেহেরুন্নেসা সাহি (২৪) নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  এ ঘটনায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থী সুনানকে গ্রেফতার করা হয়।  আনিকার বন্ধুরা এটিকে প্রেমঘটিত কারণ হিসেবে দেখলেও, সুনানের পরিবার ভিন্ন দাবি করছে।

গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে আনিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।

আনিকার একাধিক বন্ধু জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং প্রেমঘটিত টানাপোড়েনের কারণে হতাশায় ভুগছিলেন। তার এক বন্ধু জানান, মৃত্যুর দুই দিন আগে আনিকা তাকে বলেছিলেন, সুনান আমার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে। আমার আর সুইসাইড করা ছাড়া উপায় নেই।

আনিকার সহপাঠী ঢাবি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আলি মেহরাজ শাহরিয়ার মিথুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওই ছেলেটা আনিকাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে এমনভাবে ট্রমার মধ্যে রেখেছিল যে, সে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। পরশুদিন আনিকার সঙ্গে দেখা হলে সে বলেছিল, ‘আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমি এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? ও বলল, ‘ও আমাকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে না। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে আমার; এরকম অবস্থা।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ওই ছেলে আনিকাকে সবসময় মানসিক চাপে রাখত। ছোট ছোট বিষয় নিয়েও তাকে ট্রমার মধ্যে ফেলত। তার আরও কিছু সমস্যা ছিল। সাধারণ সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো তার ক্ষেত্রে আলাদা ছিল। সে আনিকাকে ফাঁদে ফেলে স্বার্থ হাছিলের পরিকল্পনা করেছিল।

অন্যদিকে, সুনানের পরিবার ও তার কয়েকজন সহপাঠী দাবি করেছেন, সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকলেও এটি আত্মহত্যার প্রধান কারণ নয়। সুনানের বড় বোন বলেন, আমরা দুই পরিবারই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম। এমনকি বিয়ের কথাও হয়েছিল। আনিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আমার ভাইকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।

এক সহপাঠী জানান, আনিকা আগে একবার ভিডিও কলে নিজের হাতে আঘাত করেছিলেন। তার রাজনৈতিক ও পারিবারিক পরিস্থিতির কারণেও তিনি হতাশায় ছিলেন।

সুনানের পরিবারের দাবি আনিকার ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে তার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছিল। ৫ আগস্টের একটি পোস্টে তিনি লেখেন, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করলাম, সে দেশ আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারল না। তোরা আমার লাশের উপর দিয়ে মিছিল যেয়ে যাস।

নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিরাজ মিস্ত্রি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি প্রেমঘটিত বিষয়ে আত্মহত্যা হতে পারে। মৃত ছাত্রীর বাম হাতে পুরোনো ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, এটি সাধারণত প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে হতাশার কারণে হয়ে থাকে। এ ঘটনায় আমরা সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছি এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই ঘটনায় বুটেক্সের একটা ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে যে ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আনিকা আত্মহত্যা করেছে। তবে এটি প্রাথমিক ধারণা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে। ওই ছেলে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে।


সর্বশেষ সংবাদ