শিক্ষার্থীদের অন্যায় আবদার মানার দায় আমার নেই: রাবি উপাচার্য

সালেহ হাসান নকীব
সালেহ হাসান নকীব  © টিডিসি ছবি

গত দুই মাস ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির জরুরি সভায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সন্তানদের ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। 

নতুন এই সিদ্ধান্তের উপর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের অন্যায় আবদার মানার কোনো দায় আমার নেই। এটা সামনে আরো পরিষ্কার হবে।’

শুরুতে অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব লিখেছেন, আজ প্রায় দু'মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা নিয়ে অস্থিরতা চলছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ একটা সিদ্ধান্ত এসেছে। এতদিন বহু কথা বলার থাকলেও কিছু বলিনি। একটা দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সব কথা বলা যায় না। তবে আজ কিছু কথা বলতে হচ্ছে। প্রথমে পরিষ্কার করি আজ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভর্তি উপকমিটির সকালে মিটিং ছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা যারা কোনো বিচারেই অনগ্রসর শ্রেণিতে পড়েন না, তাদের জন্য আর কোটা সুবিধা থাকছে না। 

কর্মচারীদের সন্তানদের কেন ১ শতাংশ কোটা রাখা হলো সে বিষয়ে তিনি লিখেছেন, একেবারে লোয়ার লেভেলে যারা সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের জন্য ১% কোটা এখন থাকছে। এর কারণটা বলি। আজ প্রায় ৩৪ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক। শুরু থেকেই দেখেছি, সুইপারের সন্তান সুইপার হচ্ছে, মালির ছেলে মালি। যদিও আমি প্রতিটি পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করি, কিন্তু সমাজ আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে চলে না। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই শ্রেণিটির এই বৃত্ত ভাঙার একটা সুযোগ এবারও থাকা উচিত।

এই প্রস্তাবনা নিয়ে আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় ভর্তি কমিটির মিটিং ছিল। সেখানে আমার সম্মানিত সহকর্মীরা তাদের মতামত দিয়েছেন। তর্কবিতর্ক হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে শেষ পর্যন্ত ভর্তি উপকমিটির সিদ্ধান্ত বলবৎ থেকেছে।

অধ্যাপক নকীব আরো লিখেছেন, আমি খুব পরিষ্কার জানি, আমাদের সিদ্ধান্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশের পছন্দ হবে না। এটা স্বাভাবিক, দীর্ঘদিনের একটা সুবিধা উঠে গেলে ভালো লাগার কথা নয়। তবে তাদের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন, আপনারা ভাবলে বুঝতে পারবেন, দীর্ঘদিনের অপমান এবং অসম্মান থেকে আপনারা এবং আপনাদের সন্তানদের মুক্ত হওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি লিখেন, কোটার ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান সবসময় পরিষ্কার। এই সব দাবি দাওয়া বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যখন কোনো নাম নিশানা ছিল না তখন থেকেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনই আমি ব্যক্তিগত মনোভাবকে সামনে রাখিনি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অনেক বড়। এদের সবার মতামতের মূল্য আছে। তবে সেই মতামত যৌক্তিক এবং ন্যায়সংগত হতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে দুজন প্রোভিসির নেতৃত্বে একটা কমিটি গঠন করা হয় - উদ্দেশ্য বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই কমিটি ফর্মালি, ইনফর্মালি বহু চেষ্টা করেছে। তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি। আমি যথেষ্ট সময় দিয়েছি। আর সময় দেওয়ার সুযোগ নেই।

নিজের অবস্থান নিয়ে উপাচার্য লিখেছেন, এই পুরো সময়টা আমার উপর যথেচ্ছ অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমি একেবারেই যা নই তা বলা হয়েছে। শুধুমাত্র যারা মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত এবং ধানাই পানাইয়ে অভ্যস্ত তারাই আমার কনভিকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে কারণ এই কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালী যুক্তি বা নৈতিক ভিত্তি নেই। কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও মনে না করে শুধুমাত্র দাবির মুখে এটা করেছি। ছাত্রছাত্রীদের অন্যায় আবদার মানার কোনো দায় আমার নেই। এটা সামনে আরো পরিষ্কার হবে।

আগামীর কার্যক্রম নিয়ে তিনি লিখেছেন, সামনের দিকে তাকাতে চাই। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস চারটি, ছাত্রছাত্রীদের জীবনমানের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামনের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়া এবং রাকসু নির্বাচন। এই সমস্ত কাজে মনোযোগ দিতে চাই। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। কোটা ইস্যু নিয়ে আর কোনো ধরনের যন্ত্রণা চাই না। নতুন যন্ত্রণা সৃষ্টির আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এই ধরনের চেষ্টাকে অপচেষ্টা বলে বিবেচনা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ