ছিনতাইকারীর আঘাতে রক্তাক্ত চবি শিক্ষার্থী, বিচারের দাবিতে ফটকে তালা

প্রধান ফটকে তালা দিয়ে
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
প্রধান ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন  © টিডিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও শাটলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে শাটল ট্রেন আটকে ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় শহিদ মিনারের সামনে শুরু হয় মানববন্ধন। পরে শহিদ মিনার থেকে শোডাউন নিয়ে প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মূল ফটক ও শাটল ট্রেন আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্যাম্পাস থেকে শহরগামী বেলা ১টা ও ২টার শাটল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। পরে সোয়া দুইটায় শাটল ট্রেন ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়।

ইংরেজি ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ণব সরকার দীপ্ত বলেন, ‘গতকাল আমাদের বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী শাটলে ছিনতাইকারীদের দ্বারা নির্মমভাবে আহত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা মানববন্ধন করেছি। যেহেতু শাটল ট্রেন অনিরাপদ, তাই আমরা শাটল ট্রেন বন্ধ করে দেই। সেই সঙ্গে প্রশাসনের কাছে আমাদের ৪ দফা দাবি পেশ করেছি। আগামীকাল প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের আলোচনা হবে দাবি পূরণের ব্যাপারে প্রশাসন আমাদের ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছে। যদি ওনারা আমাদের দাবি পূরণ না করেন, তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ctg uni Inner-2

শাটল ট্রেন আটকে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে আহত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যাই। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়ার সময় একজন অভিজ্ঞ অ্যাটেন্ডেন্টও সঙ্গে ছিলেন, যাতে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। সেখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পর, ভুক্তভোগীর পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। প্রো-ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডি ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ঘটনায় ডিআইজির সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং রাতেই অভিযানে নেমে ৫-৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আহত হওয়ার কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পাঠিয়েছি। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। এমনকি আমি তার বাসায় গিয়েও তাঁর পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সাহায়তা করা হয়েছে। আমরা শাটলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। আমরা সেখানে নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো আলোচনা করব।’

ctg uni Inner Home

শাটল ট্রেন আটকে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো দুর্বৃত্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, শাটলে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে ও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ স্থায়ীভাবে রোধ করতে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া, প্রতিটি শাটল বগিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কমপক্ষে একজন করে পুলিশ মোতায়ন করা এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বহন করা।

গতকাল রোববার শাটল ট্রেনে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোরসালিন। তার সঙ্গে এক মেয়ে বন্ধুও ছিলেন। ওই বগিতে আর কোনো শিক্ষার্থী ছিলেন না। এই সুযোগে দুজন ছিনতাইকারী বগিতে উঠে এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আসার আগমুহূর্তে তাদের কাছ থেকে ফোন এবং টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ভয় পেয়ে আহত শিক্ষার্থীর বান্ধবী ট্রেন থেকে লাফ দেন। পরে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ টাকা ও ফোন ছিনতাইয়ের সময় তারা তাকে ছুরি দিয়ে মুখে ও শরীর আঘাত করে। পরে ওই শিক্ষার্থীর চিল্লাচিল্লিতে ট্রেন থামানো হয়। তবে ট্রেন থামানোর আগেই ছিনতাইকারী দুজন চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়।


সর্বশেষ সংবাদ