বাবার মতো শিক্ষক হতে চান ৪৩তম বিসিএসে সপ্তম শতভি

বাবা রাবির প্রয়াত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সঙ্গে রিজওয়ানা শতভি
বাবা রাবির প্রয়াত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সঙ্গে রিজওয়ানা শতভি  © সংগৃহীত

২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী। দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করা এ ঘটনার পর অনেক ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে এভাবে হারিয়ে হতবাক হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। এ হত্যাকাণ্ডের পর লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

প্রয়াত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মেয়ে রিজওয়ানা শতভি। তিনিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ভালো পজিশন নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। অনার্সের মেধাতালিকায় তৃতীয় এবং মাস্টার্সের মেধাতালিকায় তিনি পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। নানা চড়াই-উতরাই পার করে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের ইংরেজি বিষয়ে সপ্তম স্থান অধিকার করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

রিজওয়ানা শতভি বাবার মতো আগেই শিক্ষকতাকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় তার। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর কার কথা সবার আগে মনে পড়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে শতভি জানান, ‘আব্বুর কথা...।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ভালো পজিশন নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। অনার্সের মেধাতালিকায় তৃতীয় এবং মাস্টার্সের মেধাতালিকায় তিনি পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। নানা চড়াই-উতরাই পার করে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের ইংরেজি বিষয়ে সপ্তম স্থান অধিকার করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন

ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী যখন প্রয়াত হন, রিজওয়ানা শতভি তখনও স্নাতকোত্তর শেষ করেননি। আকস্মিক বাবাকে হারিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন শতভি ও তার পরিবার। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আগেও দুটো বিসিএসে নন-ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ডেপুটি জেলার ও ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

চলার পথে বাবার অনুপ্রেরণা শক্তি জোগায় উল্লেখ করে শতভি বলেন, ‘আব্বুর অনুপ্রেরণা প্রচন্ড পরিমাণ কাজ করেছে। শুধু বিসিএস না, জীবনের সব ক্ষেত্রেই আব্বুর আদর্শ, জীবনাচারণ দ্বারা আমি অনেক প্রভাবিত। আব্বুও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করার আগে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে আব্বুর যাত্রা শুরু হয়।’

বাবাকে এভাবে হারানোর পর বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়াটা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা শতভি বলেন, ‘কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল তা ভাষায় অবর্ণনীয়; তার ওপরে এটা একটা লং টাইম প্রসেস। মানসিক, সামাজিক নানা ধরনের টানাপড়েন তো আছেই। এক কথায় এটা একটা যুদ্ধ। আমার পরিবার খুব সাপোর্টিভ আর স্ট্রং বলেই পারলাম। আজও আমার এ স্ট্রাগলের কথা মনে পড়লে চোখের পানি আটকে রাখতে পারি না।’

আরো পড়ুন: ‘ভাঙা হাতে’ লিখে বিসিএস জয় মাভাবিপ্রবির নাহিদের

বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার খবরটি বাবা জানলে অনেক খুশি হতেন জানিয়ে শতভি বলেন, ‘যখনই আমি কোনো চাকরিতে যোগদান করেছি; যেমন আগের দুটো নন-ক্যাডার, কিংবা তারও আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়—প্রশ্নটা তখনই আমাকে ভাবিয়েছে। নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। আর খুশির হাসি হাসতেন অনেক। আব্বু আমাকে বরাবরই ফাঁকিবাজ বলতেন, আর ভালো ফলাফল করার পর মুচকি হেসে বলতেন— ভালোই তো করেছিস।’

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মতোই সততা, ডেডিকেশন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস, নিরাহংকার এবং প্রচার বিমুখতার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই শিক্ষকতা করতে চান রিজওয়ানা শতভি। 

ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের বিসিএস প্রস্তুতি প্রসঙ্গে শতভি বলেন, ‘এখনকার বিসিএসের প্রশ্নের ধরন আগেকার থেকে কিছুটা ভিন্ন। অনেক পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল হতে হবে। সামসময়িক প্রশ্ন ও পরীক্ষার্থী বিবেচনায়— বিশেষত গণিত, বিজ্ঞান এসব বিষয়ে খুব ভালো দক্ষতা রাখতে হবে। আর প্রস্তুতি ভালো থাকাটাই বড় কথা না। লিখিত পরীক্ষায় সেটার সর্বোত্তম উপস্থাপনের বিষয়ে জানতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ