ঢাবির ছুটি বাতিলের পর ফের বাড়ানোকে ‘নাটক’ বলছেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চলতি বছরের পূর্বনির্ধারিত শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি প্রথমে বাতিল এবং পরে পিছিয়ে বাড়ানোর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ হাসিলে ছুটি বাতিল, পেছানো কিংবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

গতকাল রবিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। পরে ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে সমালোচনার মুখে ওই দিন বিকেলে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ‘ছুটি বাতিল হচ্ছে না’ বলে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে দুদিন বাড়িয়ে ছুটি ১১ দিন করা হলেও পেছানো হয় তারিখ।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বর ১০-১৩ তারিখের পরিবর্তে ডিসেম্বর ২৬-৩১ তারিখ এবং ২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন ছুটি আংশিক পরিবর্তন করে মে ২৬-৩০ তারিখের পরিবর্তে জুন ২৪-৩০ তারিখ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নতুন ঘোষণা আসার পর থেকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়া একাডেমিক কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য হলেও এমন সিদ্ধান্ত কখনই শিক্ষার্থীবান্ধব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকর্মী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিফাত বলেন বলেন, ঢাবির আওয়ামী প্রশাসন রাজনৈতিক স্বার্থে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের বাইরে তাদের ইচ্ছামতো ছুটির সময় পরিবর্তন করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য এমন নাটক করছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে হলগুলোতে শিক্ষার্থী ধরে রাখতে ছুটির এ উদ্যোগ প্রশাসনকে কাজে দেবে।

শামসুর নাহার হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার কেয়া বলেন, ছুটি পরিবর্তন করা কখনই যুক্তিসঙ্গত নয়। লেখাপড়ার এত চাপের মধ্যে ছুটি একটি গুরত্বপূর্ণ অবসর। বিভিন্ন কারণে আমরা ইচ্ছে হলেই বাড়ি ফিরতে পারি না। তাই এই গ্রীষ্মকালীন ছুটি, শীতকালীন ছুটির অপেক্ষায় থাকি। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ছুটি পেছালে সেই ছুটি তেমন কাজে আসে না।

হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, সারাবছর ক্লাসের পর শিক্ষার্থীরা শীতকালীন একটা বড় ছুটির অপেক্ষায় থাকেন। কারণ এই সময়টাতে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবারের সব সদস্যরা এক হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ থাকে। মাসের শুরুর ছুটি, মাসের শেষে দেওয়ায় অনেককেই পরীক্ষা শেষ করে বসে থাকা লাগবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদল নেতা ও পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সম্প্রতি প্রশাসন ছুটিতে যে পরিবর্তন করেছে, তা অবশ্যই রাজনৈতিক কারণেই। কেননা ভোটের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হওয়ায় তারা ঢাকা ত্যাগ করবে। আর ঢাবি প্রশাসন চায়, নির্বাচন পরিস্থিতিতেও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ধরে রাখতে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম বলেন, আসলে শিক্ষার্থীদের ছুটি বাতিল বা কর্তন করা হয়নি। শীতকালীন ছুটি ১৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এবং গ্রীষ্মের ছুটি ২৬ মে'র পরিবর্তে ২৪ জুন থেকে শুরু হবে।

রাজনৈতিক কোন স্বার্থ নয়, বরং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভুল ছিল দাবি করে মাহমুদ আলম বলেন, এখানে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কিছুটা ভুল ছিলো। পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পেরে বিষয়টি সংশোধন করে দিয়েছি। একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এমন সংশোধনী আনা হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালও একই কথা জানিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ