পরীক্ষায় ‘নকলে ধরা খাওয়া’ প্রার্থীকে শিক্ষক পদে সুপারিশ চবির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে ধরা খাওয়া প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডে অমর বণিক নামে ওই প্রার্থীকে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। বিতর্কিত শিক্ষকপ্রার্থী অমর বনিক মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

শিক্ষক পদে অমর বনিকের সুপারিশকে কেন্দ্র করে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের মতে, নকলের দায়ে অভিযুক্ত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, গত বছর মনোবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে আরও একজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অমর বণিক আবেদন করলে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সদস্য ও একজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ আনেন। বিষয়টি বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশে উল্লেখ করে দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, ওই (অমর বনিক) প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিভাগের দুইটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪০৪ ও ৪০৬ নম্বর কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় নকল করে শিক্ষকদের হাতে ধরা পড়েন অমর বণিক। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার (ইরানী) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, এই (অমর বনিক) শিক্ষকপ্রার্থীর বিরুদ্ধে দুই জন শিক্ষক নকল করার অভিযোগ এনেছেন। আমরা নকলের অভিযোগের বিষয়টি মন্তব্য হিসেবে বোর্ডে তুলে ধরেছি।

অমর বনিকঅমর বনিক

গুঞ্জন আছে বাইরের এক স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বিতর্কিত শিক্ষকপ্রার্থী অমর বণিকের নিয়োগ নিশ্চিত করতে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির উপর চাপের অভিযোগ প্রসঙ্গে কেউই মুখ খুলছেন না। তাছাড়া বিভাগের চেয়ারম্যানকে নোট অব ডিসেন্ট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এ সংক্রান্ত সভায় বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রুমানা আক্তার পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়টি তুলে ধরলে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. অরুনাভ বৈরাগী তা এড়িয়ে যান।

আরও পড়ুন: নিয়োগ প্রার্থী জোবেদাকে ডাকার ‘নকল কল লিস্ট’ সাজাল বেরোবি

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের পছন্দসই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে ভাইবা বোর্ডে রাখা হয়নি বিভাগ অথবা বিভাগ সংশ্লিষ্ট কোন বিশেষজ্ঞ। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের উপস্থিতিতে ভাইভা বোর্ডে অমর বণিককে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ সুপারিশ করা হয়।

উপাচার্যের সঙ্গে বোর্ডে আরও ছিলেন গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রুমানা আক্তার। ধারণা করা হচ্ছে পরবর্তী সিন্ডিকেটে এই প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে এমন এমন লোকদের সদস্য করা হচ্ছে, যাদের ওই বিভাগের সাথে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। যাদেরকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেই উপাচার্যের ঘনিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ সাধারণ সভাতেও আলোচনা হয়েছে। সভা থেকে উপাচার্য বরাবর শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠিয়েছি।

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদেরকে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে এই বিষয়ে অ্যাডভোকেট রিগ্যান কান্তি দাশের বরাদ দিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে আইনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন নিয়োগপ্রার্থী অমর বণিক। এছাড়া এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে অমর বণিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে রিচ করা যায়নি।

আইনী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলেন নকল করে ধরা খাওয়া অমর বণিক’ শিরোনামে গত ২২ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আমার মক্কেল অমর বণিক। কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণের সত্যতা যাচাই ছাড়াই একটি কূচক্রী মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে গণমাধ্যমে এই রকম সংবাদ প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার ফোন করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence