রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশন, পুড়ছে গাছ, বাড়ছে ধোঁয়া 

রাবিতে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে বর্জে্যর স্তুপ
রাবিতে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে বর্জে্যর স্তুপ  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দীর্ঘদিন ধরেই ফেলানো হয় ময়লা আবর্জনা। নিয়ম অনুযায়ী এসব বর্জ্য পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তবে সেসব না করে নিয়মিতই এসব আবর্জনার স্তূপে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। ফলে আশেপাশের গাছপালা এবং পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট আওতাভুক্ত বোটানিক্যাল পেস্টিসাইড রিসার্চ ফিল্ডের পাশেই যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। বর্জ্যের স্তূপে যেন এক ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে গবেষণা ফিল্ডের চারপাশ। বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাটির দুই পাশেই বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে ময়লার স্তুপ। পরিকল্পনা ছাড়াই এসব বর্জ্য আগুন দিয়ে পোড়ানোর ফলে রাস্তার পাশের বড় কয়েকটি গাছের কাণ্ড পুড়ে গেছে আর কিছু ছোট ছোট গাছ পুড়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া ময়লা পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ার ছাত্রী হল এবং শিক্ষকদের আবাসিক বাসভবনের বাসিন্দারা।

আরো পড়ুন: এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহে ছিল ডিজিটাল ট্র্যাকিং

যে জায়গাটিতে এসব বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে ঠিক তার পাশেই রয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন। এসব ময়লা-আবর্জনা কার নির্দেশে পোড়ানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সেকেন্ডারি স্টেশনের একজন কর্মচারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এসব পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে ৬টি ভ্যান থেকে ক্যাম্পাসের ময়লা আসে, আমরা সেগুলোকে যথাযথভাবেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করি।

বোটানিক্যাল পেস্টিসাইড রিসার্চ ফিল্ডের  ফিল্ড ওয়ার্কার মো. আব্দুর রাকিব বলেন, আবর্জনার স্তূপে এখানে যাতায়াত করাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এসব কার্যক্রমের ফলে মেহগনিসহ বেশ কয়েকটি বড় গাছ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেখতেই পাচ্ছেন, ছোট ছোট কিছু গাছ পুড়ে একদম ছাই হয়ে গেছে।

মো. আব্দুর রকিব আরও জানান, অফিসের সময় শেষ হওয়ার পর আমরা তো এখানে থাকি না। গবেষণা ফিল্ডটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বেও কেউ থাকে না’।

আরো পড়ুন: অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হলো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এভাবে ময়লা-আবর্জনা পুড়ানোর ফলে পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার নাসরিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় গৌরবের ৬৭ বছর। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিত চিন্তা-ভাবনার কারণে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে এই গাছগুলো। আগুনে পুড়ে ধুকে ধুঁকে মরে যাচ্ছে বিশাল আকৃতির গাছগুলো, তৈরি হচ্ছে বায়ু দূষণ।

পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাবরিনা নাজ বলেন, পেস্টিসাইড রিসার্চ ফিল্ডের সামনে বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ময়লা-আবর্জনা অনেক দিন ধরেই জমে আছে। এগুলো অপসারণ করা যাচ্ছে না, কারণ সেকেন্ডারি স্টেশন পর্যন্ত যে রাস্তাটি রয়েছে, সেটি সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে আমাদের ক্যাম্পাসের ভ্যানগুলো ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। আমি নিশ্চিত নই, তবে সম্ভবত স্টুয়ার্ড শাখা থেকে আবর্জনাগুলো পুড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা থাকতে পারে।

আরো পড়ুন: সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা তিন ইউনিটে, প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

সরাসরি বর্জ্য পোড়ানোটা বায়ু দূষণের পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায় উল্লেখ করে অধ্যাপক সাবরিনা বলেন, এটি এমন একটি জায়গায় হচ্ছে যেখানে আমাদের গবেষণা মাঠ রয়েছে। এই গবেষণা ফিল্ডে আমরা বেশ কিছু সংবেদনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। ফলে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির এই সদস্য সচিব বলেন, যতটুকু দেখেছি বড় কয়েকটি গাছ, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে নানা প্রাকৃতিক যুদ্ধের মাধ্যমে বড় হয়েছে, সেগুলোর কাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু গাছের কাণ্ড এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে এগুলোর মূল কাণ্ডটাই ঝুঁকিতে চলে গিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এই রাস্তাটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সমস্যাটির সমাধান করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence