শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় ধুয়ে দেন রাবির ৪ বন্ধু, অর্ডার নেন অনলাইনে

‘ধুয়ে দেই’ এর উদ্যোক্তা চার বন্ধু
‘ধুয়ে দেই’ এর উদ্যোক্তা চার বন্ধু  © টিডিসি ফটো

বাড়ির বাইরে থেকে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের জীবনে অন্যতম বিরক্তিকর বিষয় পরিধেয় কাপড় পরিষ্কার করা। যদিও সেটা নিজের হোক। সারাদিন ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, টিউশনি ইত্যাদি শেষে দিনের অনেকেরই পরিধেয় কাপড় পরিষ্কারের সময় মেলে না। এরই সমাধান দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। উদ্যোগকে বাস্তবায়নে ‘ধুয়ে দেই’ নামে একটা অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্ম রয়েছে তাদের।

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণকারী চার শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের মো. সালমান খান ফারসি, মো. হামিম শেঠ, মো. পলাশ বিন ফারুক ও অভিষেক চৌধুরী বিশাল। 

কার্যক্রম সম্পর্কে উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে এই ‘কাপড় ধোয়ার’  আইডিয়াটা মাথায় আসে তাদের বন্ধু ফারসির। তখন সে এই বিষয়ে আলোচনা করে তার বন্ধু হামিম শেঠের সঙ্গে। দুজনে ভাবতে শুরু করেন বিষয়টি নিয়ে। কীভাবে আগানো যায়। পরবর্তীতে তারা চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন। চার বন্ধু মিলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ শুরু করেন ‘ধুয়ে দেই’-এর কার্যক্রম।

আরো পড়ুন: আক্ষেপ নয় জীবন উভোগ করো, তরুণদের উদ্দেশ্যে ১০ পরামর্শ জ্যাক মা’র

এই বিষয়ে কথা হয় ‘ধুয়ে দেই’ -এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. সালমান খান ফারসির সাথে। তিনি বলেন, যখন আমি প্রথম বর্ষে পড়ি তখন একদিন কাপড় ধুতে গিয়ে মনে হলো, ইশ! যদি এমন একটা সুযোগ থাকতো যাতে প্রতিদিন কাপড় ধুতে হচ্ছে না তাহলে খুব ভালো হতো।

উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথটা সহজ ছিল না উল্লেখ করে সালমান খান ফারসি বলেন, যেহেতু আমাদের এই কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে হয় তাই সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কাজ করি। এর মধ্যে অর্ডার এবং ডেলিভারি দিয়ে থাকি। প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের থেকে বেশ ভালো সাড়া পেলেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া লকডাউন। কারণ ততো দিনে নিজেরা কিছু টাকা বিনিয়োগ করে কিস্তিতে একটা ওয়াশিং মেশিন কিনে ফেলেছিলেন। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসে `ধুয়ে দিই' চালু হয়েছে পুরোদমে। আমরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও এই সেবা দিচ্ছি।

‘ধুয়ে দেই’ এর একজন গ্রাহক সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের হল লাইফে বা ব্যাচেলার লাইফে ‘ধুয়ে দেই’ প্রতিষ্ঠানটি খুবই কার্যকর। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ক্লাস করে রুমে গিয়ে কাপড় ধোয়া খুবই কষ্টকর। সেই দিক থেকে ধুয়ে দেই আমাদের অনেকটা পরিত্রাণ দিয়েছে। আমি অনেক দিন থেকে ধুয়ে দেওয়ার সার্ভিস নিয়ে আসছি তাঁরা টাকাও কম নিচ্ছে সেবাটাও ভালো দিচ্ছে। 

আরো পড়ুন: চবির ক্যান্টিনের খাবারে তেলাপোকা, পরিবেশন হয় নোংরা বাসনে

এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম ছায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তার মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীরা কাপড় ধোয়ার যে উদ্যোগটা নিয়েছে সেটা এই সময়ের জন্য খুবই উপযোগী। তাদেরকে দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রেরণা পাবে। আমি আমার শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই এমন উদ্বেগ নেওয়ার জন্য।

চার তরুণ মনে করেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধুয়ে দেই’–এর শাখা খুলতে পারলে এটি একটি টেকসই উদ্যোগ হতে পারে। বর্তমানে টি-শার্টের জন্য নেওয়া হয় ৭ টাকা, শার্টের জন্য ৮ টাকা এবং প্যান্টের জন্য ১০ টাকা নেয় ধুয়ে দেই। এছাড়া, সোয়েটার ২০ টাকা, জ্যাকেট ৫০ টাকা, পাতলা কম্বল ৮০ টাকা, ডাবল কম্বল ধোয়ার জন্য ১২০ টাকা এবং ড্রাইওয়াশের জন্য ১৮০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। আর প্রতিটি কাপড় ইস্ত্রি করতে নেওয়া হয় ৫ টাকা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হামীম বলেন, আমাদের এই কার্যক্রমটা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের প্রথম টার্গেট হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সেবা পৌঁছে দেওয়া। এখান থেকে আস্তে আস্তে শহর কেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিব। 

সালমান বলেন, এখন আপাতত রাবি, রুয়েট এবং এর আশেপাশের এলাকায় সার্ভিস চালু রয়েছে। এই মাস থেকেই আমরা পুরো শহরে সার্ভিস দেওয়া শুরু করব। আমরা একটা ভ্যানগাড়ি নিয়েছি, এর সাহায্যে পুরো রাজশাহী শহর কভার করার চেষ্টা করব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence