মৌসুমে ৬০ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে পিঠা স্টল পরিদর্শন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম
ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে পিঠা স্টল পরিদর্শন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম  © টিডিসি ফটো

নগরীতে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এ শীত আশির্বাদ হয়ে ধরা দিচ্ছে ক্যাম্পাস সংলগ্ন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। ক্যাম্পাসজুড়ে তাদের বসানো হরেকরকমের শীতের পিঠার আয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। প্রতি মৌসুমে ক্যাম্পাসটিতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার শীতের পিঠা বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাম্পাস জুড়ে ছোটবড় মোট ১৬টি জায়গায় ১৮টি দোকান বসেছে। বিকেল থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব দোকানে পিঠা বিক্রি চলে। বেশিরভাগ দোকানে মালিকরা কাজ করছেন সপরিবারে। আর এতে নারীরাও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মৌসুমী এসব দোকান করে পরিবার পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পেরে অনেক খুশি তারা।

দোকানদাররা জানান, এসব দোকান চলবে প্রায় তিন থেকে চার মাস। গড়ে তিন মাস ধরে হিসাব করলে মৌসুমে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বিক্রি হয়। বাহারী পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নারকেল পুলি, ভাঁপাপিঠা, মাশরুম চপ, ধনে চপ, চিকেন পিঠা, পিঁয়াজু, মাংসপুলি, ফুলকপির চপ, ডিম চিতই, পাটিসাপটা ও কুমড়ো ফুলের চপ।

পিঠার দোকানগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের বেশি ভীড় চোখে পড়ে প্রীতিলতা হলের সামনে, বটতলা সংলগ্ন মওলানা ভাসানী হলের মোড়ে, নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্ত¦রে, শেখ হাসিনা হলের সামনে, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনের এবং শিক্ষক ক্লাব সংলগ্ন পিঠার দোকানগুলোতে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে বিক্রি হয়।

আরও পড়ুন: খাবারের মান নিশ্চিতে জাবি ভিসির ক্যাম্পাস পরিদর্শন

তাদের একজন শামসুন্নাহার বেগম (৩৮)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে তার পিঠার দোকান। দুই সন্তানের একজন পড়েন মাদ্রাসায়। পিঠা বিক্রির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘পোলাডা মাদ্রাসায় পড়ে। ওর বাপ যা কামাই করে সেটা দিয়ে পরিবার চলে। পিঠার দোকান করে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলের খরচ চলে। পরিবারে একটু হেল্প করতে পারছি তাতে ভালো লাগে।’

দোকানীদের আরেকজন লাল মিয়া (৬৫)। শেখ হাসিনা হলের সামনে দোকান করেন তিনি। লাল মিয়ার ছেলে ও স্ত্রী সহযোগিতা করেন পিঠা তৈরি ও বিক্রিতে। লাল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন ৩-৪ হাজার বেচি, কখনো ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচি। যা আসে খারাপ না, মোটামুটি চলে যায়। তবে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার লাভ কম হচ্ছে।’

মৌসুমী পিঠার স্বাদ নিতে ভোলেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। শনিবার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে থাকা পিঠার দোকান পরিদর্শন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি মতবিনিময় করেন তিনি। এসময় দোকান মালিকদের স্বাস্থ্যকর উপায়ে পিঠা পরিবেশনেরও নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়াও দোকানগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ক্যাম্পাসে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা। ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী ফারিয়া হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এখানে বিভিন্ন কারণে পরিবারের অভাব বোধ করি। শীতে পরিবারের সেই অভাবের কিছুটা হলেও পূরণ করে বাহারী স্বাদের এসব পিঠা। আর হলের পাশে দোকান হওয়ায় পিঠা দ্রুত পাওয়া যায়।