দাম বাড়লেও মান বাড়েনি, একই মেন্যুতে চলছে রাবির ডাইনিং-ক্যান্টিন
- রায়হান ইসলাম, রাবি
- প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২২ AM , আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২২ AM
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং ও ক্যান্টিনগুলোতে কয়েকমাস আগে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও সেই তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়নি খাবারের মান। প্রতিদিন একই ধরনের খাবার, অপরিপূর্ণ রান্না, খাবারে পোকাসহ নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ডাইনিং ও ক্যান্টিনগুলোতে প্রতিদিন একই ধরণের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। খাবারে থাকছে প্রায়ই আধা সেদ্ধ ভাত এবং অর্ধেক পরিমাণ মাছ অথবা মাংসের টুকরো। কখনো কখনো খাবারে পাওয়া যাচ্ছে পোকা-মাকড়। মানসম্মত না হওয়ার পাশাপাশি এসব খাবার রুচিসম্মতও নয় বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, এসব খাবার সুষম পুষ্টিচাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। অন্যদিকে বেশি দামে ক্যান্টিনে খাওয়াও ব্যয়বহুল। ফলে মৌলিক চাহিদা খাদ্য নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংগুলোতে খাবারের মূল্য দুপুরে ২৪ টাকার পরিবর্তে ২৮ টাকা এবং রাতে ১৮ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। খাবারের মান ঠিক রাখতে সুষম খাবারের তালিকা তৈরি এবং খাবারের মান পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষকে পরিদর্শনের নির্দেশ দেন প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। তবে নির্দেশনা থাকলেও গত চারমাসে তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। ফলে প্রায় সব হলেই মাছ, মাংস ও ডিমের সাথে আলু, বেগুন, কুমড়া অথবা পেপের দিয়েই প্রতিদিন রান্না হয়। কিন্তু এই মেন্যুর কোন পরবর্তন হচ্ছে না। এমনকি প্রায় সব হলেই কোন না কোন বেলায় দুর্গন্ধযুক্ত মোটা চালের ভাত রান্না হয়। যা স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় খেয়ে পুরোপুরি ক্ষুধা নিবারণ করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে মেয়েদের হলের ডাইনিংয়ে বরাবরই খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পঁচা গন্ধযুক্ত মাছ, আধাসেদ্ধ তরকারি এবং মোটা চালের ভাত খাবার হিসেবে দেওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেন চবি অধ্যাপক ড. জামালউদ্দীন
সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিং দুপুরের খাবারের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ডাইনিং গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে হল প্রাধ্যক্ষ বিষয়টি সমাধান করেন। খাবারের এই দূরাবস্থার ফলে স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিংয়ে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি খাবার বিক্রি হয়। অথচ এই হলেও রাতের খাবারে মাছ অথবা মাংসের সাথে যে আলুর তরকারি দেয়া হয়, যা খেতে পারছেনা অনেক শিক্ষার্থী। এমনকি মাছ ও মাংসের টুকরো এতোই ছোট যে অর্ধেক খাবার খেতেই তা ফুরিয়ে যায়। যার ফলে প্রায় সময়ই শুধু ডাল দিয়ে খাবার শেষ করছে শিক্ষার্থীরা, কেউবা বাকিটুকু না খেয়েই উঠে যাচ্ছে। এমনকি মোটা চালের ভাত মাঝে মাঝেই পুরোপুরি সেদ্ধ না হওয়ায় খেতে পারছেনা তারা। একই চিত্র দেখা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিংয়ে। অন্য হলগুলোতেও এক-দুই দিনের ব্যবধানে দুপুরে অথবা রাতে এই সমস্যা দেখা যায়। অপরদিকে ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের মান কিছুটা ভালো। তবে অভিযোগ রয়েছে সেখানে পরিমাণের তুলনায় অধিক টাকায় বিক্রি হচ্ছে খাবার। ক্যান্টিনগুলোতে ভাতের পরিমাণ কম হওয়ায় এখানে একবেলা খেতে ডাইনিংয়ের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হয়। যা সাধ্যের বাইরে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট হলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মানের খাবার পরিবেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এই টাকার মধ্যে যতটুকু পারছি খাবারের মান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি বলে জানান তারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ড শামীম হোসেন বলেন, হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্টের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো তদারকিও হয়েছে। কিন্তু মাঝখানে ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিদর্শন কমে গেছে। ফলে আবারো হয়তো এমনটি ঘটছে। আমরা দ্রুতই এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, হলগুলোতে খাবারের মান ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। সুষম খাবারের তালিকাও দেয়া হয়েছে। এমনকি খাবারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরেও যদি কোন ডাইনিংয়ে তালিকা অনুসরণ না করা হয় এবং খাবার গুণগত মান ঠিক না হয়, তবে প্রশাসনিক ভাবে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।