যেভাবে সংরক্ষণ করবেন কোরবানির মাংস

কোরবানির মাংস
কোরবানির মাংস  © সংগৃহীত

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা মানেই কোরবানির মাংস ভাগ করে নেওয়া এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণের প্রস্তুতি। অনেক সময় দেখা যায়, ভুল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করায় অল্প সময়েই মাংস নষ্ট হয়ে যায়। এতে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ হারানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই মাংস সংরক্ষণের কিছু কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি জেনে রাখা জরুরি।

রেফ্রিজারেশনের সঠিক নিয়ম
মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত পদ্ধতি হলো ডিপ ফ্রিজে রাখা। শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইট বা মাইনাস ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরুর মাংস ৮-১০ মাস, খাসির মাংস ৫-৬ মাস, মহিষ ও উটের মাংস ৬ মাস এবং ভেড়ার মাংস ২-৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

সংরক্ষণের আগে যা করবেন
মাংস থেকে রক্ত, পানি ও চর্বি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। ছায়াযুক্ত স্থানে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা হতে দিন। ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে জিপলক ব্যাগ বা ভ্যাকিউম-সিল্ড ব্যাগে রাখুন। প্রতিটি প্যাকেটে তারিখ ও মাংসের অংশ উল্লেখ করে রাখলে পরে বের করতে সুবিধা হবে। খোলা ট্রে বা পাত্রে রাখা যাবে না। খবরের কাগজে মাংস মোড়ানো যাবে না। ফ্রিজে মাছ ও কাঁচা মাংস একসঙ্গে রাখা উচিত নয়।

জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ
যাদের ফ্রিজে জায়গার অভাব রয়েছে, তারা চাইলে কিছু মাংস রান্না বা জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে হালকা চর্বিযুক্ত মাংস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লবণ ও হলুদ দিয়ে জ্বাল দিতে হয়। গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস ভালো থাকে। প্রতিদিন নতুন করে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে ঢেকে রাখতে হবে।
লেবুর রস বা ভিনেগার মেশালে ৫-৬ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ
প্রাচীন এই পদ্ধতিটি এখনো অনেকেই ব্যবহার করেন। এতে চর্বিমুক্ত মাংস ধুয়ে পাতলা করে কেটে সূর্যের আলোয় শুকিয়ে নেওয়া হয়। পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে ঢেকে রাখলে ধুলোবালি পড়বে না। সম্পূর্ণ শুকানোর পর মুখবন্ধ কৌটায় রেখে মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে। রান্নার আগে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে যেন নরম হয়।

আধুনিক ও বিকল্প পদ্ধতি

আরও পড়ুন: নকল ওষুধে জীবনহানি! জেনে নিন চেনার উপায়

সল্টিং পদ্ধতি
লবণ, কিউরিং লবণ, ব্রাউন চিনি ও মসলা মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে এক মাস পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়।

স্মোকিং পদ্ধতি
হট বা কোল্ড স্মোকিংয়ের মাধ্যমে তাপে জীবাণু ধ্বংস করে মাংস সংরক্ষণ করা হয়।

ক্যানিং ও কোল্ড স্টেরিলাইজেশন পদ্ধতি
উন্নত দেশে ব্যবহৃত এই পদ্ধতিতে উচ্চ তাপ বা আয়োনাইজড রেডিয়েশন ব্যবহার করে মাংস সংরক্ষণ করা হয়। এতে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস এক নজরে:
কোরবানির পর মাংস ৪-৫ ঘণ্টা পরেই সংরক্ষণ করুন।
একবার ফ্রিজে রাখা মাংস বারবার গলিয়ে আবার ফ্রিজে রাখা যাবে না।
ফ্রিজার খোলার সংখ্যা যত কম হবে, তাপমাত্রা তত ভালো থাকবে।
বিদ্যুৎ সমস্যা থাকলে আইস বক্স ব্যবহার করুন।

সতর্কতা
খোলা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ মাংস ফেলে রাখা, খবরের কাগজে মোড়ানো কিংবা অপরিষ্কারভাবে ফ্রিজে রাখা থেকে বিরত থাকুন। এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিয়ে মাংস পচে যেতে পারে।

কোরবানির মাংস শুধু খাবার নয়, এটি একটি ধর্মীয় আমানত। তাই এটিকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্বাস্থ্য ও সুস্বাদের কথা মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করুন, নিরাপদ থাকুন।


সর্বশেষ সংবাদ