আপনার সন্তান কি প্রতিভাহীন? জানুন সফলতার সঠিক পথ

প্রতিভা বিকাশে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বাবা-মার ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। কেউ কেউ সন্তানদের দিয়ে নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চান। কেউ আবার এত বেশি প্রত্যাশা করেন যে, সামান্য ভুলেই সন্তানের কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল কিংবা খেলাধুলার পারফরম্যান্সে হতাশ হচ্ছেন? চিন্তা নেই—বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্র্যান্টের মতে, সাফল্যের চাবিকাঠি জন্মগত প্রতিভা নয়, বরং লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে গড়ে তোলাই।

গ্র্যান্ট একজন প্রথিতযশা অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিস্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলিং লেখক। বিল গেটস, সেরেনা উইলিয়ামস, ওপরা উইনফ্রেসহ বিশ্বের বহু সফল ব্যক্তির পরামর্শদাতা তিনি। তার সাম্প্রতিক বই Hidden Potential: The Science of Achieving Greater Things–এ তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে সাধারণ মানুষও নিজেদের গড়পড়তা অবস্থান থেকে উঠে এসে ব্যতিক্রম সাফল্য অর্জন করতে পারে।

জন্মগত প্রতিভা নয়, ধৈর্য ও পরিশ্রমেই সাফল্য
প্রথম জীবনে গ্র্যান্ট নিজেও ছিলেন একজন ‘দীর্ঘ সময় পর বিকশিত হওয়া’ মানুষ। হাইস্কুলে তিনি ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ নামে পরিচিত ছিলেন। দেহের নমনীয়তা ছিল না, লেখায় দুর্বলতা ছিল, জনসমক্ষে কথা বলার ভয় ছিল চরম। অথচ সময়ের ব্যবধানে তিনিই হয়ে উঠেছেন জুনিয়র অলিম্পিক ডাইভিং দলের সদস্য। পাঁচটি বেস্টসেলিং বইয়ের লেখক এবং একজন আন্তর্জাতিক বক্তা।

গ্র্যান্ট জানান, একসময় তিনি ভাবতেন যে যাদের শৈশবে প্রতিভা দেখা যায়, তারাই ভবিষ্যতে সফল হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বহু সেরা অলিম্পিয়ান, স্নায়ুবিজ্ঞানী কিংবা সংগীতশিল্পী শুরুতে বিশেষ প্রতিভাবান ছিলেন না। তাদের সফলতার মূল ছিল—চেষ্টা, অধ্যবসায় এবং ধৈর্য।

বাবা-মার দৃষ্টিভঙ্গিই পারে সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করতে
প্রতিভা বিকাশে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বাবা-মার ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। কেউ কেউ সন্তানদের দিয়ে নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চান। কেউ আবার এত বেশি প্রত্যাশা করেন যে, সামান্য ভুলেই সন্তানের কঠোর সমালোচনা করেন।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের গবেষক ড. থমাস কারান দেখিয়েছেন, এ ধরনের মনোভাব শিশুদের মধ্যে পারফেকশনিজম বা ‘সবকিছু নিখুঁত করতে হবে’ মানসিকতা তৈরি করে। এর ফলে ভুল হলে শিশুরা নিজেকেই দোষারোপ করে, শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কী করবেন?
সন্তানের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে সবচেয়ে কার্যকর হলো একজন বিশ্বাসযোগ্য শিক্ষক বা মেন্টরের সংস্পর্শে আনা। এমন কাউকে পাশে রাখুন যিনি তাকে বিশ্বাস করেন, নিয়ন্ত্রণ করতে চান না এবং যার প্রতি সন্তানের আস্থা গড়ে ওঠে।

গ্র্যান্টের মতে, শিশুর জীবনের প্রারম্ভিক সফলতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল মানসিক দৃঢ়তা, সমস্যার সমাধানে দক্ষতা এবং শেখার মনোভাব।

অ্যাডাম গ্র্যান্টের ৫টি সাফল্যের নিয়ম

১. বিজ্ঞানীর মতো চিন্তা করুন
নিজের মতামতকে পরীক্ষা করুন, ভুল স্বীকার করুন, সংশোধন করে এগিয়ে যান।

২. “সি-স্পঞ্জ” হোন
সব মত গ্রহণ করবেন না। কেবল সেই মতামত গ্রহণ করুন যা আপনার উপকারে আসবে। বিশেষজ্ঞ, সহানুভূতিশীল এবং আপনাকে জানে এমন মানুষের পরামর্শ আপনার জন্য মূল্যবান।

৩. অন্যকে শেখাতে আগ্রহী হোন
আপনি যা শিখছেন, তা অন্যকে শেখানোর মধ্য দিয়েই তা আরও পোক্ত হবে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং শেখার আগ্রহও দৃঢ় হবে।

৪. ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’ মেনে নিন
নিজেকে কখনো কখনো অযোগ্য মনে করা মানেই আপনি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। তাই নিজের সম্পর্কে সত্যটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। সেটা স্বীকার করে নেওয়া উচিত এবং কাজ করে যাওয়া উচিত। এই অনিশ্চয়তা অনেক সফল মানুষেরই অভিজ্ঞতা।

৫. নিখুঁত নয়, উৎকর্ষ অনুসন্ধান করুন
সব সময় নিখুঁত হতে হবে এমন নয়। বরং প্রতিনিয়ত ভালো করার চেষ্টাই বড় শক্তি। পাঁচ বছর আগের আপনি যদি আজকের আপনাকে দেখতেন, তাহলে গর্বিত হতেন কিনা—এই প্রশ্ন নিজেকে করুন।

আপনার সন্তান যদি এখনো চোখে পড়ার মতো কিছু করে না, তবু হতাশ হবেন না। তার ভিতরে হয়তো লুকিয়ে আছে অপার সম্ভাবনা, যা সঠিক সহায়তা, অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে জেগে উঠতে পারে। সন্তানকে বিশ্বাস করুন, তার ভুলগুলোকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন—তবেই সে একদিন হয়ে উঠতে পারে নিজের, এমনকি আপনারও গর্বের কারণ।

 


সর্বশেষ সংবাদ