সরকারি পলিটেকনিকে বাতিল হচ্ছে ‘জিপিএ’ ভিত্তিক ভর্তি পদ্ধতি
- আলামিন ইভান
- প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৬ PM , আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৬ PM

ফলাফল বা জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এর ফলে দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে প্রার্থীদের আর শুধু ফলাফলের উপর নির্ভর করলেই হবে না, বসতে হবে ভর্তি পরীক্ষায়ও। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতির পক্ষে সকলেই একমত হয়েছেন, এমনটাই জানিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
জানা যায়, একসময় দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। মেধার মূল্যায়নে এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে জিপিএ-ভিত্তিক ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করে। ওই সময় সংশ্লিষ্টরা জানায়, এভাবে ভর্তি কার্যক্রম আরও সহজ ও সমন্বিত হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। তবে দীর্ঘদিন পর পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। নতুন শিক্ষাব্যবস্থা, দক্ষতা মূল্যায়ন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচনের বিষয়গুলো সামনে রেখে তারা আবারও ভর্তি পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এই পরিবর্তন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, অনেকেই মনে করছেন, এটি প্রকৃত মেধাবীদের সুযোগ করে দেবে এবং কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: ক্লাস ও প্রাকটিক্যাল তদারকিতে কারিগরি বোর্ডের নতুন উদ্যোগ
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনা এবং বর্তমান বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রয়েছে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি পুনরায় চালু করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর ফলে, আগামী শিক্ষাবর্ষে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করা, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চমানের দক্ষতা এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যায়। সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করে এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাবে কারিগরি বোর্ড। এজন্য রেজুলেশন প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ।
কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান, কারিগরি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ ও ছাত্র প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেছি। ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতির পক্ষে সকলেই একমত হয়েছেন যে, কারিগরি শিক্ষার কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নেই- অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল কবীর
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান জিপিএ পদ্ধতির কারণে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ হারাচ্ছেন। জিপিএ’র উপর নির্ভরশীল এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত দক্ষতা এবং গুণাবলী সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছে না, ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া, আগের সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এবং অধিকতর গ্রহণযোগ্য ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিটি বাতিল করার ফলে, মানসম্মত শিক্ষার্থী প্রাপ্তিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউটগুলো এখন শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে আরও বেশি সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে, কার্যকর এবং দক্ষ ভর্তি পদ্ধতির অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান, কারিগরি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ ও ছাত্র প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেছি। ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতির পক্ষে সকলেই একমত হয়েছেন যে, কারিগরি শিক্ষার কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নেই।
তিনি জানান, ২০১৬ সালে ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে বাতিলের পলিটেকনিকগুলোতে শিক্ষার মানের অবনতি হয়েছে। কারিগরির বর্তমান অবস্থা উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বোর্ড অনেকগুলো কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করছি, গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে কারিগরি শিক্ষার মান যুগোপযোগী হবে।