সিট ফাউন্ডেশনের সনদে এমপিওভুক্ত হওয়া নিয়ে বিপাকে শিক্ষকরা
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ PM , আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৯ PM
সরকারের অনুমোদন ছাড়াই একাধিক বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানোর অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (সিট) ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোর্স শেষে সনদ অর্জন করলেও তা দিয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না শিক্ষকরা।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক সিট ফাউন্ডেশনের সনদ দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করেন। তবে তাদের আবেদন বাতিল করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক তদন্ত করেছে সরকারের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআই)। অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানটি কোর্স পরিচালনার কোনো অনুমোদন নেয়নি বলে বেরিয়ে এসেছে।
যদিও সিট ফাউন্ডেশনের দাবি, যে কোর্সগুলোর সনদ তারা দেন, তার জন্য কোনো অনুমোদন প্রয়োজন হয় না। এছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমোদিত। ফলে এখান থেকে সনদ অর্জন করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অনেকেই তাদের সনদে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলেও দাবি তাদের।
‘আমি সিট ফাউন্ডেশন থেকে এক বছর মেয়াদী কোর্স করেছিলাম। এজন্য আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কোর্স শেষে তারা একটি সনদ দিয়েছিল। সেই সনদ দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করলে মাউশি তা বাতিল করেছে’—ভুক্তভোগী শিক্ষক
সিট ফাউন্ডেশনের সনদ দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এমপিওভুক্তির আবেদন করেছিলেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মহলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) জয়সেন সরকার। গত ৮ জুন এ বিষয়ে মতামত জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মাউশি। সংস্থাটির শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সিট ফাউন্ডেশন হতে অর্জিত ডিপ্লোমা সনদে সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সিট ফাউন্ডেশনের চটকদার প্রচারণা দেখে তারা সেখানে ভর্তি হন। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ অর্জন করেন। চাকরিতে প্রবেশের পর সেই সনদ দিয়ে এমপিওর আবেদন করা হলে তা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ‘সিট ফাউন্ডেশনের সনদে দিয়ে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার একটি স্কুলে কর্মরত এক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি সিট ফাউন্ডেশন থেকে এক বছর মেয়াদী কোর্স করেছিলাম। এজন্য আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কোর্স শেষে তারা একটি সনদ দিয়েছিল। সেই সনদ দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করলে মাউশি তা বাতিল করেছে।’
‘কম্পিউটার কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানোর অনুমতি সিট ফাউন্ডেশন নেয়নি। এর বেশি এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়’—প্রকৌশলী বি.এম. আমিনুল ইসলাম, পরিদর্শক, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড
ওই শিক্ষক আরও জানান, ‘সিট ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটসহ সব জায়গায় লেখা এটি সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। যেহেতু সরকারের অনুমোদন রয়েছে তাই সেখানে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে এখন জানতে পারছি এই কোর্সগুলো করানোর ক্ষেত্রে তারা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বোর্ড কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। এটি এক ধরনের প্রতারণা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
সিট ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে, লাইব্রেরি সায়েন্স, কম্পিউটার, আইসিটি, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা, টেক্সটাইলসহ ৩০ বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার অধিকাংশেরই কোনো অনুমোদন নেই। তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কয়েকটি কোর্স পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে অন্য কোনো কোর্স পরিচালনার অনুমোদন নেই প্রতিষ্ঠানটির।
ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে সিট ফাউন্ডেশন থেকে সনদ অর্জন করা শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত হতে না পারার বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরি সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্সসহ একাধিক বিষয়ের সনদ দিচ্ছে। এই কোর্সেগুলো পরিচালনার জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার পৃথক পৃথক অনুমোদন নিতে হয়। তবে তারা তা না নিয়েই সনদ দিচ্ছে। যা পুরোপুরি অবৈধ বলে জানিয়েছে ডিআইএ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএ’র এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সিট ফাউন্ডেশনের কম্পিউটার কিংবা লাইব্রেরি সায়েন্স বিষয়ে এক বছর মেয়াদী কোর্স পরিচালনার জন্য কোনো অনুমোদন নেয়নি। আপনার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবেন।’
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক প্রকৌশলী বি.এম. আমিনুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কম্পিউটার কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানোর অনুমতি সিট ফাউন্ডেশন নেয়নি। এর বেশি এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
প্রফেসর আব্দুল মান্নান সরকার
জানতে চাইলে সিট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা সরকারের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের কোর্স করাচ্ছি। আপনার অনুমতির কাগজ দরকার হলে আমাদের এখানে আসুন। অথবা আপনাদের অফিসিয়াল প্যাডে চিঠি পাঠান। আমরা চিঠির জবাব দিয়ে দেব।’
আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিয়ে শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না; সিটের সনদে এমপিওভুক্ত করানো সম্ভব নয় বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে মাউশি। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জানা মতে মাউশি থেকে এমন কিছু বলা হয়নি। আমার কাছে লিখিত রয়েছে জানালে তিনি সরাসরি অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।