বড় বিমানের বিশাল ঝুঁকি ছোট পাখি

প্রতীকি ছবি
প্রতীকি ছবি  © সংগৃহীত

আকাশপথে ভ্রমণ নিরাপদ ও দ্রুত হলেও, মাঝেমধ্যেই প্রকৃতির কিছু ছোট উপাদান হয়ে দাঁড়ায় বড় ঝুঁকির কারণ। এমনই এক উপাদান হলো পাখি। বিশালাকৃতি, টন টন ওজনের জেট বিমানের জন্য একটি সামান্য পাখিও হয়ে উঠতে পারে মরণফাঁদ। একে বলা হয় ‘বার্ড স্ট্রাইক’। অনেকেই ভাবেন, একটি পাখির সঙ্গে ধাক্কায় এত বড় বিমানের কিছু হবে না, এটি নিছক কাকতালীয় ঘটনা মাত্র। কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে ভয়াবহ। একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা প্রমাণ করেছে, পাখির সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষ মানেই একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়। 

কীভাবে ঘটে বার্ড স্ট্রাইক?
বিমান যখন উড্ডয়ন বা অবতরণ করে, তখন এটি ভূমির খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকে। এই সময়টিতেই পাখিদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ অনেক পাখি মাটির কাছাকাছি ওড়ে এবং খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য বিমানবন্দরের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। বিশেষ করে যেসব বিমানবন্দরের পাশে জলাশয়, গাছপালা বা উন্মুক্ত বর্জ্য থাকে, সেখানে পাখির উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।

বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে কী হয়?

ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়
জেট ইঞ্জিনে প্রবেশ করা পাখির শরীর উচ্চগতির টারবাইন ব্লেডে ধাক্কা খেয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এতে ইঞ্জিন থেমে যেতে পারে।

বিমান ঝুঁকিতে পড়ে
একাধিক ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে উড্ডয়ন বা অবতরণে জটিলতা দেখা দেয়। উড্ডয়নের ঠিক পরেই এ ঘটনা ঘটলে জরুরি অবতরণ ছাড়া উপায় থাকে না।

আগুন ধরে যেতে পারে
পাখির পালক বা মাংস জ্বালানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। এতে যাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।

বাস্তব দুর্ঘটনার নজির
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়েতে নামার সময় পাখির সতর্কবার্তা পেয়েও একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। ১৮১ জন আরোহীর মধ্যে কেবল দুজন ক্রু প্রাণে বেঁচে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে শুধু পাখি নয়, বৈদ্যুতিক ত্রুটিসহ একাধিক কারণ কাজ করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার পাখির উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটেছিল দুর্ঘটনাটি। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রাজহাঁসের সঙ্গে সংঘর্ষে একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়, নিহত হন ২৪ জন সেনা। ২০০৯ সালের ‘মিরাকল অন দ্য হাডসন’–এ পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের পর পাইলট সুলেনবার্গার দক্ষতা দিয়ে নদীতে সফল জরুরি অবতরণ করেছিলেন।

সব বার্ড স্ট্রাইক কি ভয়ানক?
না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (FAA) তথ্য মতে, ২০২৩ সালে দেশটিতে ১৯,৪০০টি বার্ড স্ট্রাইক ঘটেছে। তবে এর বেশির ভাগই ছোটখাটো ক্ষতিতে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্রিটেনেও ২০২২ সালে ১,৪০০টি বার্ড স্ট্রাইকের মধ্যে মাত্র ১০০টিরও কম ক্ষেত্রে বিমান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল।

আরও পড়ুন: বিমানে থাকা ২৪২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে

প্রতিরোধে নেওয়া হয় যেসব ব্যবস্থা
বার্ড কন্ট্রোল ইউনিট: শব্দ বোমা, লেজার গান, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে পাখি তাড়ানো হয়।
রাডার ও সেন্সর: আধুনিক রাডার পাখির উপস্থিতি শনাক্ত করে।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: বিমানবন্দরের আশপাশে জলাশয়, গাছ বা বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
জনসচেতনতা: বিমানবন্দরের পাশে বর্জ্য ফেলা বা পাখিকে আকৃষ্ট করার মতো কাজ নিরুৎসাহিত করা হয়।

ভবিষ্যতের সমাধান কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু প্রযুক্তি নয়, মানুষের সচেতনতাও দরকার। বিমানবন্দর এলাকায় বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা, পাখির প্রাকৃতিক অভ্যাস বিবেচনায় এনে ডিজাইন করা পরিবেশ, এবং উন্নত বার্ড-ডিটেকশন প্রযুক্তি-সবমিলিয়ে একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ