ঘুমানোর আগে এবং উঠার পরে শিক্ষকের সেই কথা মনে পড়ত— মেডিকেলে দ্বিতীয় ত্বোহা

  © সংগৃহীত

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে জাতীয় মেধায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন হলিক্রস কলেজের ছাত্রী তানজিম মুনতাকা সর্বা। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯২.৫। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী তাজওয়ার হাসনাত তোহা।

দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী তাজওয়ার হাসনাত ত্বোহা তার ফলাফলের অনুভূতি জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তার আজকের সাফল্যের পেছনে তার আগ্রহ, পরিশ্রম প্রিয়তা ও স্বপ্নের কথা জানান।

তিনি অনুভূতি জানিয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২৪ সেশনে জাতীয় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। মহান রাব্বুল আল আমিনের নিকট অনন্ত অসীম কৃতজ্ঞতা আমাকে এই সম্মানিত আসনে আরোহিত হতে মনোনীত করার জন্য।

এই অর্জনের জন্য আমার পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, আমার স্কুল শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ , আমার নটরডেম কলেজের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা গণ, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আমার সুদৃঢ় নির্দেশনা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কোচিং প্রতিষ্ঠানসহ সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী।

তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালে একবার আমি একটি অ্যাডমিশন অরিয়েন্টেড প্রতিযোগিতায় (নবম শ্রেণির সিলেবাস)উপজেলা প্রথম হ‌ই। সেদিন আমার স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষিকা মাহফুজা ম্যাডাম বলেছিলেন, আমাদের ত্বোহা ইনশাআল্লাহ ডিএমসিতে যাবে। সেবারই আমার শোনা প্রথমবার DMC । সেখান থেকে স্বপ্নের বীজবপন। কিন্তু প্রান্তিক এলাকায় খুব বেশি কম্পিটিশন না থাকায় আমি এই কম্পিটিশনের ডেপথ বুঝতে পারিনি। ২০২২ সালে যখন প্রথম নটরডেম কলেজে পা দিই, প্রথমদিন ক্লাস করে এসে দ্বিতীয় দিন যাওয়ার সময় আব্বুকে বলি, এই কলেজে ৫০০ তম‌ও অনেক ভালো rank. সময়ের সাথে Dedication বাড়ে। বাড়ে আমার পড়ালেখার আগ্রহ। কলেজের প্রথম পরীক্ষায় আমি একশোর মধ্যে আসি। আমার Dedication আরো বেড়ে যায়।

আমার কলেজ থেকে কিং Asir Anjum Khan ভাই বেরিয়ে আসেন, ব্যাপক আলোচনা তৈরি হলে তখন জানতে পারি , ভর্তি পরীক্ষায় টপার হতে পারলে সবাই একনামে চিনবে। আমি আরো পড়াশুনা বাড়িয়ে যখন ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় বসি, তখন আমার এভারেজ ৯০ এর কাছাকাছি চলে যায় (শুধু নদচিয়ানরা বুঝতে পারবেন)। ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে আমার ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ঝুঁকি পড়ি।

আরো বলেন, সবাই জানত আমি মেডিকেল ড্রিমার কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে সলিড ইঞ্জিনিয়ারিং এ শিফট হ‌ই। সবসময় physics ই করতাম। Year Final physics পরীক্ষা শুরু হওয়ার একমিনিট পর দুর্ভাগ্যবশত আমার ক্যালকুলেটর নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি বিধ্বস্ত হ‌ই। যখন পেপার দেওয়া হয়, সুজিত স্যার (random speech)বলেন,"যদি তোমাদের কখনো মনে হয়, কোনো উদ্দেশ্যের জন্য তুমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছ, তারপরও সেটার কোনো Reward পাওনি। তবে এমন একদিন আসবে যেদিন তোমার ঐ ব্যর্থ পরিশ্রম বহুগুণ বেড়ে Reward নিয়ে আসবে এবং সবাইকে জানিয়ে দিবে ঐ না পাওয়াটুকু।" বিষয়টা আমার সাথে দারুণ ভাবে relatable হয়।

প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠার পর সুজিত স্যারের এই কথাগুলো মনে মনে বলতাম। সেদিনের ওই ক্লাসের পর গত দেড় বছরে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ হয় নি।

আমাকে যারা আজকের রেজাল্টের আগে থেকে চিনেন, হয় স্কুল বা জেলার টপার হিসেবে ;নয়তো ২০২৩ সালে দ্বিতীয়-তৃতীয়াংশে। মাঝখানে একটা বড় সময় গেছে যেটা ২১ সালের ত্বোহাকে ২৩ বা ২৪ সালের ত্বোহায় পরিণত করেছে । এই গল্প অন্য কোনোদিন করা যাবে। আমার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি কামনায় সকলের নিকট দোয়া চাই।


সর্বশেষ সংবাদ