২২ বছরেই আইএএস পাস অনন্যা সামলাচ্ছেন প্রশাসন, জনপ্রিয় ইনস্টাগ্রামেও
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১০ AM , আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫১ PM
খে মনে হবে কলেজছাত্রী। অথচ তিনি ইতিমধ্যেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন দেশের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরে কাজ করেন। মাঝেমধ্যেই ছুটে যান ‘স্পেশ্যাল ডিউটি’র তলব পেয়ে। নাম অনন্যা সিংহ। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের একজন আইএএস অফিসার।
২২ বছর বয়সে আইএএস হওয়ার পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন অনন্যা। ২০১৯ সালে প্রথম বার ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন। তবে প্রথম বার পরীক্ষা দিয়েই পাশ করবেন, তা অনন্যা নিজেও ভাবতে পারেননি।
এক সাক্ষাৎকারে এ আমলা বলেছেন, ‘সুযোগ পাব না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। কারণ, পরীক্ষা একেবারেই মনের মতো হয়নি। তাই পরের বছর পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলাম। ইউপিএসসি মেন পরীক্ষার জন্য উত্তর লেখার অভ্যাস করতাম। পরীক্ষা শেষ হতেই আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে গিয়েছিলাম।’ যদিও অনন্যাকে আর দ্বিতীয় বার পরীক্ষায় বসতে হয়নি।
লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে দেশে ৫১তম স্থানাধিকার করেন অনন্যা। রেজাল্ট দেখে অবাকই হয়েছিলেন তিনি। যদিও অনন্যার স্কুল-কলেজের রেকর্ড বলছে, তিনি বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।
অনন্যার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ ছিল ঈর্ষণীয়। দশম এবং দ্বাদশের পরীক্ষায় নিজের জেলার শীর্ষ স্থানাধিকারীদের একজন ছিলেন তিনি। আইসিএসইতে (২০১৩) ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। আইএসসি (২০১৫)-তে পেয়েছিলেন ৯৮.২৫ শতাংশ।
উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদের (এখন প্রয়াগরাজ) মেয়ে। স্কুলের পড়াশোনা ইলাহাবাদের সেন্ট মেরিজ কনভেন্টে শেষ করে দিল্লির কলেজে ভর্তি হন অনন্যা। দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অফ কমার্স থেকে বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে স্নাতক পাশ করেন।
বাবা জেলা আদালতের প্রাক্তন বিচারক। মা অঞ্জলি সিংহ প্রয়াগরাজের ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রুরাল টেকনোলজির প্রবীণ অধ্যাপক। অনন্যার দাদা ঐশ্বর্য প্রতাপ সিংহ কানপুরের চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্নাও কানপুরের এক ম্যাজিস্ট্রেট।
অনন্যা অবশ্য ছোট থেকেই আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বলে এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তবে স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় স্নাতক হওয়ার আগের বছর থেকে।
২০১৭ সাল থেকে আইএএস হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন অনন্যা। যদিও ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার জন্য দু’বছর ঘরবন্দি হয়ে মাথা গুঁজে পড়াশোনা করেননি তিনি। প্রথমে দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। শেষের দিকে অত সময়ও দিতেন না অনন্যা। তখন দিনে ঠিক ৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন তিনি।
ইউপিএসসি দেশের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম কঠিন বলে গণ্য হয়। অনেক পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মাসের পর মাস নিজেদের ঘরে বন্দি রেখে পড়াশোনা করেন। মনঃসংযোগে ব্যাঘাত না হয় এই ভেবে সমাজমাধ্যম থেকে নিজেদের সরিয়েও নেন অনেকে। অথচ অনন্যার প্রস্তুতি সে তুলনায় ছিল অনেক কম পরিশ্রমসাধ্য।
পরিশ্রমের থেকে পরিকল্পনায় জোর দিয়েছিলেন অনন্যা। কী ভাবে প্রস্তুতি নেবেন, তার একটা ছক কষে নিয়েছিলেন আগেই। ২০১৯ সালে পরীক্ষায় বসবেন। হাতে ছিল প্রায় দু’বছর। প্রস্তুতির সময়কে তিন ভাগে ভেঙে নিয়েছিলেন তিনি— কারেন্ট অ্যাফেয়ার, মক টেস্ট এবং মেইন। সেভাবেই পড়াশোনা করেছেন।
তবে পড়াশোনা আর আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখার বাইরে আরও দু’টি শখ ছিল অনন্যার। তিনি সিন্থেসাইজ়ার বাজাতেন। সুযোগ মতো নানা বিষয়ে বইও পড়তেন। ২০১৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মুসৌরিতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে আইএএস হওয়ার প্রশিক্ষণ নেন অনন্যা। ২০২১ সালে শেষ হয় সেই প্রশিক্ষণ।
ওই বছরই পশ্চিমবঙ্গে আসেন জেলায় কাজ করার প্রশিক্ষণ নিতে। পরে দিল্লিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করেন কেন্দ্রীয় কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকে। তার পর কলকাতায়। ২৫ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের স্পেশ্যাল ডিউটি অফিসার হিসাবে দায়িত্ব নেন। আপাতত সেই বিভাগেই কর্মরত।
কম বয়সে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে আইএএস কর্তা টিনা দাবিরও। তিনিও ২২ বছর বয়সে ইউপিএসসি পাশ করেন। গোটা দেশে তিনি প্রথম স্থানাধিকার করেছিলেন। আইএএসদের দুনিয়ার ‘তারকা’ তিনি। তবে অনন্যাও সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়।
টিনার মতোই সমাজমাধ্যমে সক্রিয় তিনি। নিয়মিত নিজের খবর দেন অনুগামীদের। ইনস্টাগ্রামে ৪০ হাজারের বেশি অনুরাগী রয়েছে তাঁর। আনন্দবাজার